২৫ বছর আ/গের কথা। ভীরু পায়ে, দুরু দুরু বু/কে নিয়ে ক্যামেরার সামনে হাজির হয়েছিলেন একটি মেয়ে। মিডিয়ার রূপকথার জগতে পা রেখে তার মনে হলো সে যেন থাকতে এসেছে; সেটাই হয়েছে। অভিনয়ের আলো ছড়িয়ে দ্রুত নিজের জন্য জায়গা করে নেন। তিনি আর কেউ নন, দিলারা হানিফ পূর্ণিমা। প্রথম সিনেমা ‘এ জীবন তোমার আমার’ মুক্তি পায় ১৯৯৮ সালে। ‘মনের মাঝে তুমি’ দিয়ে তার ক্যারিয়ার মোড় নেয়। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। গুণে গুণে অভিনয় করে ২৫ বছর কাটিয়েছেন।
শুরুতে প্রশ্ন ছিল- দীর্ঘদিন ধরে নিজের জনপ্রিয়তা ধরে রেখে কাজের প্রতি আপনার প্যাশন কীভাবে বজায় রেখেছেন? অভিনয় ছাড়া অন্য কোনো কাজে পুরোপুরি মনোযোগ দেইনি। এক মুহূর্ত অভিনয় ছাড়া নিজেকে কল্পনাও করতে পারিনি। আজকের অবস্থানে পৌঁছানোর জন্য দর্শকদের সমান কৃতিত্ব প্রাপ্য। তাদের সহযোগিতা ছাড়া কাজ করা সম্ভব হতো না। কাল্পনিক জগতকে নিজের রাজ্যে পরিণত করার পর এই রাজকন্যা কাজ থেকে বিরতি নেন। ক্যারিয়ারে এসেছে অনেক উত্থান-পতন। কিন্তু হাল ছাড়েননি। ফিরে আসার পর, তার আত্মা ঠিক এই পৃথিবীর অতল গহ্বরে উড়ে বেড়িয়েছে। তিনি কখনোই তার মনে শঙ্কা বা নার্ভাসনের কালো মেঘ জমা হতে দেননি। বরং নিজেকে প্রস্তুত করেছেন, আবার আলো ছড়ানোর উদ্দেশ্যে। অভিনয় জীবনে বীরদর্পেই ভালো কাজ দিয়ে প্রতিভার বিচ্ছুরণ। চলচ্চিত্র, নাটক, বিজ্ঞাপন – এমনকি সাম্প্রতিক ওয়েব মাধ্যমে তার প্রতিটি উপস্থিতি অগণিত দর্শকদের মুগ্ধ করেছে।
সম্প্রতি ছয় পর্বের ওয়েব সিরিজ ‘হোটেল রিলাক্স’ দিয়ে নতুন আ/লোচনায় আসেন এই অভিনেত্রী। একজন পুলিশ অফিসার হিসেবে তার ভূমিকা দর্শকদের মুগ্ধ করেছে। গত ঈদে মুক্তি পায় কাজল আরেফিন আমিরের ধারাবাহিকটি। মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে তার অভিনীত ‘জ্যাম’, ‘গাঙচিল’ ও ‘আহারে জীবন’। তিনটি সিনেমাতেই তাকে নতুন রূপে দেখতে পাবেন দর্শকরা। শুধু অভিনেত্রী হিসেবে নয়, উপস্থাপক হিসেবেও নিজেকে প্রমাণ করেছেন পূর্ণিমা। উপস্থাপনাকালে জনপ্রিয় শিল্পীদের অনুকরণে পূর্ণিমার অভিনয়ে মুগ্ধ দর্শকরাও। তাদের প্রিয় উপস্থাপকের তালিকায়ও উঠে এসেছে পূর্ণিমার নাম।
রজত জয়ন্তীতে এসে আপনার ক্যারিয়ার নিয়ে আপনি কতটা সন্তুষ্ট? পূর্ণিমার উত্তর- ‘আমি কখনোই সন্তুষ্ট নই। আমি মনে করি একজন শিল্পী একদিকে সন্তুষ্ট হলে তার সামনের পথ রুদ্ধ হয়ে যায়। তাই অভিনয়ের ক্ষুধা আমার মধ্যে ধরে রাখি। আমার পরিবারের সদস্যরা সংস্কৃতিমনা ছিলেন। বোন থিয়েটার এবং সিনেমায় কাজ করেছেন। তবে আমার পরিবারের কেউ ভাবতেই পারেনি আমি অভিনেত্রী হবো। বলতে পারেন হঠাৎ করেই অভিনয়ে এসেছি। আমার ক্যারিয়ারের এই মুহুর্তে সাফল্যে আমি অবশ্যই খুশি। আমি আমার অভিনয় জীবনে প্রায় ৮০টি সিনেমায় কাজ করেছি। অনেক সিনেমা সুপার ডুপার হিট হয়েছে। আবার কিছু সিনেমা চলেনি। আমি তাকে দুঃখিত না; আমি যা চেয়েছি তার চেয়ে বেশি পেয়েছি।’ বিভিন্ন অনুকূল ও প্রতিকূল অভিজ্ঞতা নিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে পূর্ণিমা নিজেকে প্রতি মুহূর্তে আগের চেয়ে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী মনে করেন। তাই জানতে চাই তিনি জীবনকে কীভাবে দেখেন, এর অর্থ কোথায়? প্রতিটি মুহূর্ত আমাদের জীবনে মূল্যবান। আমরা কেউ জানি না আমরা পৃথিবীতে কতদিন বেঁচে থাকব। আজ যে সময় চলে গেছে তা আর ফিরে আসবে না। এই ক্ষণস্থায়ী জীবনে সৎ কাজে নিয়োজিত হওয়া উচিত। প্রতিটি মুহূর্ত সুন্দরভাবে উপভোগ করা উচিত। জীবনের গুরুত্ব এখানেই।’ – বললেন পূর্ণিমা