বিএনপি (BNP)’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী (Ruhul Kabir Rizvi) বলেছেন, সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া—এটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নয়। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, “কবে সংস্কার সম্পন্ন হবে আর কবে নির্বাচন কমিশন (Election Commission) তফসিল ঘোষণা করবে—সেটা জাতি জানতে চায়।”
শনিবার (১৭ মে) বিকেলে নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলার হাতিরদিয়া ছাদত আলী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত আরাফাত রহমান কোকো স্মৃতি গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
‘সংস্কার পদ্মা নদীর মতো, চারশ বছরের বটগাছ নয়’
রিজভী বলেন, “সংস্কার তো চারশ বছরের পুরনো বটগাছের মতো এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকে না। এটি পদ্মা নদীর পানির মতো এগিয়ে চলে। যুগে যুগে জনগণের প্রয়োজন অনুযায়ী সংস্কার হতে হয়।”
তিনি আরও বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে যে কাজগুলো আটকে আছে, সেগুলো একটি নির্বাচিত সরকার থাকলে করা যেত। শেয়ারবাজারের নাজুক অবস্থা, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, কোরবানির আগেই মসলার দাম বেড়ে যাওয়া—এসব সমস্যা সমাধানে জবাবদিহিমূলক সরকার দরকার।”
‘ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারকে জনতার আন্দোলনে বিদায়’
রিজভী বলেন, “প্রায় এক বছর আগে তরুণ ছাত্র সমাজ এবং তাদের অভিভাবকদের আন্দোলনে রক্তপিপাসু ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) সরকারের পতন ঘটে। তিনি পারলে লক্ষ মানুষকে হত্যা করে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিলেন।”
তার অভিযোগ, “আন্দোলনের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের গুলি চালাতে সরাসরি নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।”
গুম, হত্যা ও বিচারবহির্ভূত দমন নিয়ে অভিযোগ
রিজভী আরও বলেন, “গত ১৫ বছর ধরে বিএনপি নেতাকর্মীদের ক্রসফায়ার, গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হতে হয়েছে। চৌধুরী আলম, সাইফুল ইসলাম হিরু, ইলিয়াস আলী সহ বহু নেতাকর্মী এখনো নিখোঁজ।”
তিনি বলেন, “র্যাব ও পুলিশ বাহিনী তাদের মায়ের কোল থেকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে, কিন্তু আজও তাদের হদিস মেলেনি।”
‘গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে বিএনপির ত্যাগ’
রিজভী বলেন, “গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার জন্য ১৫ বছর ধরে বিএনপি জেল-জুলুম সহ্য করে জনগণের অধিকার আদায়ের চেষ্টা করে যাচ্ছে। গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতা সেই আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করেছে।”
তিনি প্রশ্ন করেন, “জনগণের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া ক্ষমতা এখনো কেন ফেরত দেওয়া হচ্ছে না? এত দেরি কেন?”
উপস্থিত নেতারা
আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন:
– বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও নরসিংদী জেলা বিএনপি-র সভাপতি খায়রুল কবির খোকন
– সাবেক সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন মাস্টার
– ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সভাপতি রাশেদ ইকবাল খান ও সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান মিন্টু
– যুবদলের সভাপতি মহসিন হোসেন বিদ্যুৎ
– ছাত্রদল নেতা সিদ্দিকুর রহমান নাহিদ
– মনোহরদী উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক মিয়া
– যুগ্ম আহ্বায়ক মাহমুদুল হক
– সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম বাছেদ মোল্লা ভুট্টো প্রমুখ।