আওয়ামী সমর্থকদের বিএনপিতে সুযোগ দেওয়ার প্রসঙ্গে মিশ্র প্রতিক্রিয়া, শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যে বিভ্রান্তি

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ (Awami League) নেতা-কর্মীদের বিএনপি (BNP) দলে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে শীর্ষ নেতাদের বক্তব্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে দলটির অভ্যন্তরে। কেউ বলছেন এটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত, কেউ আবার এটিকে দলীয় আদর্শের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলছেন।

রিজভীর আহ্বান ও সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম

৮ মে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী (Ruhul Kabir Rizvi) জানান, যারা ফ্যাসিবাদী শাসনের আগে আওয়ামী লীগ ত্যাগ করেছেন অথবা শাসনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, তাদের বিএনপিতে যুক্ত হওয়ার সুযোগ থাকবে। একইসঙ্গে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, ব্যাংকার, কৃষক, শ্রমিক, এমনকি এনজিও কর্মকর্তারাও বিএনপির প্রাথমিক সদস্য হতে পারবেন—যদি তারা দলের আদর্শে বিশ্বাসী হন।

১৫ মে থেকে এক কোটির বেশি সদস্য সংগ্রহের লক্ষ্যে সদস্য নবায়ন এবং নতুন সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম চালু করে বিএনপি। এতে অনেকেই মনে করছেন, সংকটে পড়া আওয়ামী কর্মীদের এনসিপি বা জামায়াতমুখী হওয়ার আগেই বিএনপি তাদের জন্য দরজা খুলে দিচ্ছে।

আমীর খসরুর শর্তযুক্ত বক্তব্য

১৭ মে চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী (Amir Khasru Mahmud Chowdhury) বলেন, “আওয়ামী লীগের চিহ্নিত দোসররা বিএনপির সদস্য হতে পারবেন না।” তবে সমাজে গ্রহণযোগ্য, রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ, যারা বিএনপির বিরুদ্ধে কখনো সক্রিয় ছিলেন না, এমন ব্যক্তিরা সদস্য হতে পারেন।

সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া

এই বক্তব্যের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। একজন ব্যবহারকারী ফেসবুকে লেখেন, “বিএনপি নেতারা যেন আওয়ামী লীগের ‘বিএনপি যোগ্যতা’ নির্ধারণে ব্যস্ত। অথচ বাস্তবতা হলো, আওয়ামী কর্মীরা এখনো প্রত্যাবর্তনের স্বপ্নেই বিভোর।”

মাঠ পর্যায়ে ও নেতৃবৃন্দের মতভেদ

বিএনপির মধ্যম সারির নেতারা ও মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক দ্বিধা-দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, বিএনপি গণমানুষের দল। এতে বহিরাগত সুবিধাবাদীদের জায়গা নেই। আবার কেউ বলছেন, এ ধরনের অন্তর্ভুক্তি দল ভারী করতে সহায়ক হতে পারে, তবে এর জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা উচিত।

এক শীর্ষ নেতা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, “বিএনপির জন্য কোটি কোটি মানুষ কাজ করেছে, তাদেরকেই সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। দলবদলকারীদের দিয়ে ভবিষ্যৎ গঠন সম্ভব নয়।”

গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের অবস্থান

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় (Gayeshwar Chandra Roy) সারাবাংলাকে বলেন, “গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিএনপিতে যোগ দেওয়ার নিয়ম স্পষ্ট। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ, শহীদ জিয়ার দর্শন ও গণতন্ত্রে বিশ্বাস—এই নীতিতে যার আস্থা আছে, সে-ই বিএনপিতে আসতে পারে।”

তিনি বলেন, “নেতারা যে বক্তব্য দিচ্ছেন, সেটির ভাষাগত পার্থক্য থাকতে পারে, তবে মূল ভাবনা একই। এটিকে বিতর্কের ইস্যু বানানো ঠিক নয়।”