দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করতে নিজ প্রতিষ্ঠানকেও প্রশ্নের মুখে রাখার আহ্বান জানালেন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) (Anti-Corruption Commission – ACC) এর চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন (Mohammad Abdul Momen)। তিনি বলেন, “আমাদের মধ্যে কমবেশি দুর্নীতি রয়েছে, সেটি অস্বীকার করি না।”
রোববার সকালে মৌলভীবাজার শিল্পকলা একাডেমি (Moulvibazar Shilpakala Academy)তে আয়োজিত গণশুনানিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুদক চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
“ভুয়া দিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হোক”
ড. মোমেন বলেন, “১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হওয়ার পর উদ্ভব ঘটেছে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার। আর ৫ আগস্টের পর এসেছে ভুয়া সমন্বয়কের ধারা। চলুন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হোক এই ভুয়া দিয়ে। প্রথমেই দুদকের ভুয়া চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধেই শুরু হোক। এমনকি প্রকৃত চেয়ারম্যান হলেও অভিযোগ থাকলে তাকেও ধরা হোক।”
তিনি বলেন, “ঘুষ গ্রহণ, দ্রব্য বা সুবিধা নেওয়ার প্রবণতা আমাদের মধ্যে রয়েছে। এ থেকে আমাদের বের হতে হবে।”
দুর্নীতির উৎস ও প্রতিরোধ নিয়ে মন্তব্য
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “দুর্নীতির দুটি দিক রয়েছে—ডিমান্ড সাইট ও সাপ্লাই সাইট। একজন ঘুষ চায়, অন্যজন দিতে প্রস্তুত থাকে। সাপ্লাই সাইট বন্ধ না করলে ডিমান্ড সাইটও বন্ধ হবে না। তাই প্রথমেই ঘুষদাতাদের থামাতে হবে।”
তিনি বলেন, “দুর্নীতি বৈষম্য সৃষ্টি করে। দুর্নীতি যত কমবে, বৈষম্য তত কমবে।”
জনবল সংকট ও গণশুনানির প্রয়োজনীয়তা
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, “আমাদের জনবল সীমিত। সবাই চায় আমরা আরও কার্যকর হই, কিন্তু জনবল না বাড়ালে তা সম্ভব নয়। তবে জনবল বাড়লে আমাদের বেতনও বাড়বে, যা জনগণের ট্যাক্স থেকেই যাবে। সুতরাং প্রশ্ন হলো—আমরা কমিশন বড় করব, নাকি দুর্নীতি কমাব?”
তিনি আরও বলেন, “আপনার অফিসে, আমার অফিসে দুর্নীতিবাজ থাকতে পারে। তাদের কারণেই প্রতিষ্ঠান প্রশ্নবিদ্ধ হয়। প্রতিটি অফিসে অন্তত মাসে একবার গণশুনানি করলে অনেক সমস্যার সমাধান হবে।”
গণশুনানিতে উঠে আসা দুর্ভোগ
গণশুনানিতে অংশগ্রহণকারীরা পাসপোর্ট অফিস (Passport Office), বিআরটিএ (BRTA), ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল (Moulvibazar Sadar Hospital), ভূমি অফিসসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে দুর্নীতির অভিযোগ ও ভোগান্তির কথা তুলে ধরেন। সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর কর্মকর্তারা কিছু অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে প্রতিকার নেওয়ার আশ্বাস দেন।
উপস্থিত অতিথিবৃন্দ
মৌলভীবাজার (Moulvibazar) জেলা প্রশাসক মো. ইসরাঈল হোসেন (Md. Israil Hossain) এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন দুদকের কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাফিজ আহসান ফরিদ (Hafiz Ahsan Farid), মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন (Md. Akhtar Hossain), পুলিশ সুপার এমকেএইচ জাহাঙ্গীর হোসেন (MKH Jahangir Hossain)।
স্বাগত বক্তব্য দেন দুদকের হবিগঞ্জ সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. এরশাদ মিয়া (Ershad Mia)।