চাকরি পুনর্বহালসহ চার দফা দাবিতে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব (National Press Club) এলাকায় দিনভর বিক্ষোভ করেন চাকরিচ্যুত সশস্ত্র বাহিনীর একদল সদস্য। রোববার (১৮ মে) সকাল থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচি চলাকালে বিকেলে ঘটনাস্থলে আসেন সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তাঁদের সঙ্গে আলোচনার পর সিদ্ধান্তে না পৌঁছানোয় আন্দোলনকারীরা কর্মকর্তাদের গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন, যাতে তাঁরা সেখান থেকে বের হতে না পারেন।
সেনা কর্মকর্তার বক্তব্য: “মরতে হলে এখানেই মরবো”
এ সময় এক সেনা কর্মকর্তা আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বলেন, “আমি ইউনিফর্ম পরে আসছি, আমি কাপুরুষ না। আমার ইউনিফর্মের সম্মান আছে। মরতে হলে এখানেই মরবো, বাঁচতে হলে এখানেই বাঁচবো। আপনারা গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েছেন, এগুলো কেমন কথা? আমি কেন আপনাদের ওপর গাড়ি চালিয়ে দেব? দয়া করে এসব কাজ করবেন না।”
পরে ওই কর্মকর্তা আন্দোলনকারীদের মধ্য থেকে কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে তাদের প্রতিনিধি হিসেবে সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিতে বলেন।
চার দফা দাবি
চাকরি ফিরে পাওয়া এবং ন্যায়বিচারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা চার দফা দাবি উত্থাপন করেছেন। দাবিগুলো হলো:
-
চাকরিচ্যুতির সময় থেকে এখন পর্যন্ত সম্পূর্ণ বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাসহ চাকরি পুনর্বহাল।
-
পুনর্বহাল সম্ভব না হলে, সংশ্লিষ্ট সদস্যকে সরকারি সব সুযোগ-সুবিধাসহ পূর্ণ পেনশন দিতে হবে।
-
বর্তমান আইন কাঠামো ও বিচার ব্যবস্থার সংস্কার, বিশেষ করে যেসব সদস্যকে একতরফাভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে তা পুনর্বিবেচনা।
-
গতকাল গ্রেপ্তার হওয়া প্রধান সমন্বয়ক ও বরখাস্ত সৈনিক নাইমুল ইসলাম (Naimul Islam)–কে মুক্তি দিতে হবে।
দীর্ঘমেয়াদী কর্মসূচির হুঁশিয়ারি
বিক্ষোভকারীরা জানান, যদি তাঁদের দাবির বিষয়ে সন্তোষজনক সমাধান না আসে, তবে তাঁরা জাহাঙ্গীর গেট (Jahangir Gate) অভিমুখে লংমার্চ করবেন। সাবেক নৌবাহিনীর সদস্য এম বাহাউদ্দিন বলেন, “আমরা ৪৫ মিনিট সময় দিয়েছি। এর মধ্যে কেউ না এলে লংমার্চ শুরু করবো।”
চাকরিচ্যুত সৈনিক মো. রিপন হোসেন বলেন, “তিন বাহিনী মিলে প্রায় ৬০০ জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। অনেককে বাধ্যতামূলক পেনশনে পাঠানো হয়েছে, আবার অনেককে কোর্ট মার্শালের মাধ্যমে বরখাস্ত করা হয়েছে। এসব অন্যায় সিদ্ধান্ত আমরা মানি না।”
বৈঠক হলেও ফলপ্রসূ নয়
দুপুর ২টা থেকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন সেনা কর্মকর্তারা। বিকেল সোয়া ৪টার দিকে প্রেসক্লাব চত্বরে উত্তেজনা দেখা দেয়, যখন বৈঠক ব্যর্থ হওয়ায় আন্দোলনকারীরা গাড়ি আটকে দেয়।
এই বিক্ষোভ সাম্প্রতিক সময়ের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে জমে থাকা অসন্তোষ ও ন্যায্যতা নিয়ে প্রশ্নের ইঙ্গিত বহন করছে বলে বিশ্লেষকদের অভিমত।