নিবন্ধন স্থগিত হলেও ইউপি চেয়ারম্যানদের পদে থাকার বাধা নেই : আইনি ব্যাখ্যা

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ (Bangladesh Awami League)–এর সকল রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার পর দলটির নিবন্ধনও সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে নির্বাচন কমিশন (Election Commission)। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে—‘নৌকা’ প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানরা কি তাদের পদে থাকতে পারবেন?

আইন বিশ্লেষণ বলছে, নিবন্ধন স্থগিত হওয়া বা রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার কারণে ইউপি চেয়ারম্যানদের পদচ্যুত করার কোনো আইনি ভিত্তি নেই।

আইন কী বলছে?

স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন-২০০৯ অনুযায়ী, চেয়ারম্যানদের অপসারণযোগ্য অপরাধের মধ্যে রয়েছে দুর্নীতি, কুশাসন, রাষ্ট্রবিরোধী কার্যকলাপ, অনুপস্থিতি, নৈতিক স্খলন, অপরাধমূলক দণ্ড এবং দায়িত্ব পালনে অক্ষমতা ইত্যাদি। তবে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন স্থগিত বা নিষিদ্ধ হওয়ার কারণে কোনো চেয়ারম্যানকে সরিয়ে দেওয়ার বিধান নেই।

একজন নির্বাচন কমিশনের আইন শাখার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “কমিশনের কাজ গেজেট প্রকাশ পর্যন্ত। চেয়ারম্যানদের অপসারণের দায়িত্ব স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের। নিবন্ধন স্থগিত হলেও তা চেয়ারম্যান পদে থাকার অযোগ্যতা সৃষ্টি করে না।”

পূর্বের নজির কী বলে?

২০১৩ সালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর (Bangladesh Jamaat-e-Islami) নিবন্ধন বাতিল হলেও দলটির দুই সংসদ সদস্য হামিদুর রহমান আযাদ ও মাওলানা শামসুল ইসলাম তাদের পদে বহাল ছিলেন, কারণ কোনো আইন তাদের অপসারণের অনুমতি দেয়নি।

নির্বাচন কমিশন ও সংশ্লিষ্টদের মতামত

ইসি সচিব আখতার আহমেদ (EC Secretary Akhtar Ahmed) বলেন, “এটি একটি ভালো প্রশ্ন। নিবন্ধন স্থগিত হলেও ইউপি চেয়ারম্যানরা পদে থাকতে পারবেন কি না, তা আইনি ব্যাখ্যার মাধ্যমে নির্ধারণ করতে হবে।”

এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের (Local Government Reform Commission) প্রধান তোফায়েল আহমেদ (Tofael Ahmed) বলেন, “চেয়ারম্যানরা তো জননির্বাচিত প্রতিনিধি। তাদের পদে থাকার বিষয়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। আইন অনুযায়ী, তারা দায়িত্ব পালন করতে পারেন।”

তিনি আরও বলেন, “যদি সংস্কারের ফলে দলীয়ভাবে স্থানীয় নির্বাচন বাতিল হয়ে যায়, তখন ভিন্ন বাস্তবতা সৃষ্টি হবে। কিন্তু আপাতত আইন অনুযায়ী তারা বৈধভাবেই চেয়ারম্যান পদে বহাল থাকবেন।”

প্রেক্ষাপট

কয়েকটি রাজনৈতিক দলের আন্দোলনের মুখে গত ১০ মে সরকার আওয়ামী লীগের সকল কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে এবং এরপর ১২ মে নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধন স্থগিত করে। উল্লেখ্য, ২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশে নিবন্ধন ছাড়া কোনো দল নিজস্ব প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না।