স্বৈরাচারের স্মৃতি ও নতুন সংকট: চট্টগ্রামে অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খানের মন্তব্য

বর্তমান সময়ে নতুন স্বৈরাচারের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না—এমন মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও চিন্তাবিদ অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান (Professor Salimullah Khan)। তিনি বলেন, একটি স্বৈরাচারের পতনের পর যে নির্যাতিত হয়েছিল, সে-ই পরবর্তীতে অন্যকে নির্যাতন করে—এটি একটি প্রাকৃতিক প্রবণতা। কিন্তু এই চক্র যেন পুনরাবৃত্তি না হয়, সেজন্য আমাদের রক্ষাকবচ তৈরি করতে হবে।

এই বক্তব্য তিনি দেন ১৯ মে, সোমবার, চট্টগ্রাম সরকারি সিটি কলেজে (Chattogram Government City College) ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ আয়োজিত “সংকটের তিন চেহারা: রাষ্ট্র, জাতি ও জনগণ” শীর্ষক সেমিনারে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন কলেজের উপাধ্যক্ষ জসিম উদ্দীন আহমেদ (Jasim Uddin Ahmed) এবং বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

জুলাই-আগস্টের হত্যাকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগ

অধ্যাপক সলিমুল্লাহ বলেন, “জুলাই-আগস্টে আমাদের ছেলেমেয়েরা যা করেছে, বছর না পেরোতেই মানুষ তা ভুলে যাচ্ছে। নিহতের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। অথচ জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই সময় ১,৪০০ জন মানুষ নিহত হয়েছিল।” তিনি আরও বলেন, বর্তমান কোনো সভ্য জাতির ইতিহাসে এ ধরনের গণহত্যার নজির নেই।

তিনি ১৯১৯ সালে পাঞ্জাবের (Punjab) জেনারেল ডায়ার (General Dyer) কর্তৃক ১,২০০ থেকে ১,৩০০ জন হত্যার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “কাজী নজরুল ইসলাম (Kazi Nazrul Islam) তাঁর যুগবাণী বইয়ে বলেছিলেন, নিহতদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ গড়া দরকার, আবার ডায়ারের নামেও একটি স্মৃতিস্তম্ভ থাকা উচিত যাতে মানুষ বোঝে কেউ কতটা জালিম হতে পারে। আমি বিনীতভাবে অনুরোধ করি—যারা আমাদের দেশে এই হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে, তাদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ করা হোক, যা দিনাজপুর (Dinajpur) থেকে কক্সবাজার (Cox’s Bazar) পর্যন্ত মানুষ মনে রাখবে।”

আদিবাসী ও পরিচয়ের প্রশ্নে অবস্থান

পার্বত্য চট্টগ্রাম (Chittagong Hill Tracts) সম্পর্কে তিনি বলেন, “তাদের ‘উপজাতি’ বলা সঠিক নয়। চট্টগ্রামের মানুষের উচিত তাদের বিষয়ে সবচেয়ে বেশি কথা বলা। পরিচয় সংক্রান্ত বিষয়ে বড় কোনো আলোচনা শুরুর আগে গণভোটের মাধ্যমে জেনে নেওয়া উচিত, তারা কী নামে পরিচিত হতে চান।”

অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে ড. ইউনূস প্রসঙ্গে মত

ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus) প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের বিষয়ে দৌড় শেষ না হওয়া পর্যন্ত কাউকে খারাপ বলা উচিত নয়। তবে আমি মনে করি, ড. ইউনূস চেয়ে ভালো অপশন আর ছিল না। তিনি যদি ব্যর্থ হন, দায় আমাদেরও।”