জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান (Waqar-uz-Zaman) বলেছেন, কেবলমাত্র জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারই দেশের দিকনির্দেশনা দিতে পারে। তিনি উল্লেখ করেন, অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের হাতে এমন সিদ্ধান্ত থাকা উচিত নয়, যা দেশের ভবিষ্যতের গতিপথ নির্ধারণ করে।
অফিসার্স অ্যাড্রেসে সেনাপ্রধানের বক্তব্য
গতকাল ঢাকা সেনানিবাসে (Dhaka Cantonment) সেনা প্রাঙ্গণে অফিসার্স অ্যাড্রেসে সেনাপ্রধান এই বক্তব্য দেন। তিনি নির্বাচন ঘিরে সেনাবাহিনীর নিরপেক্ষ ভূমিকার ওপর জোর দেন এবং সব সদস্যকে নিরপেক্ষতা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করার নির্দেশনা দেন। সভায় ঢাকায় অবস্থানরত বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা অংশ নেন এবং অনেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন।
নির্বাচন ও জাতীয় নিরাপত্তা প্রশ্নে অসন্তোষ
আলোচনায় সেনাপ্রধান ও অন্যান্য কর্মকর্তা নির্বাচন, করিডোর, বন্দর, সংস্কারসহ সমসাময়িক বিভিন্ন ইস্যুতে মতামত দেন। সেনাবাহিনীকে জাতীয় নিরাপত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে অন্ধকারে রাখার কারণে অসন্তোষ প্রকাশ করেন তারা। সেনাপ্রধান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সেনাবাহিনীকে উপেক্ষা করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, যা তাদের এখতিয়ার নয়। এ প্রসঙ্গে তিনি আবারও ডিসেম্বরের মধ্যে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজনীয়তার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।
করিডোর ও বন্দর নিয়ে মন্তব্য
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান (Waqar-uz-Zaman) স্পষ্ট করে বলেন, “দেয়ার উইল বি নো করিডোর”। তিনি জানান, মানবিক করিডোর কিংবা চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর (Chattogram Seaport) সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার কেবল নির্বাচিত সরকারেরই রয়েছে।
প্রশাসনিক ভেঙে পড়া ও অভিভাবকহীন সেনাবাহিনী
সেনাপ্রধান জানান, দেশের বেসামরিক প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলো কার্যত ভেঙে পড়েছে। তিনি বলেন, “শুধু সশস্ত্র বাহিনী এখনো টিকে আছে এবং দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে কাজ করছে।” দীর্ঘ নয় মাস ধরে সেনাবাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি, কিন্তু নির্বাচিত সরকারের অভাবে নিজেকে অভিভাবকহীন মনে করছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকারের প্রয়োজনীয়তা
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, “অ্যান ইলেকটেড গভর্নমেন্ট উইল টেক ওভার অন ওয়ান জানুয়ারি, ইফ নট আরলিয়ার।” তিনি নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকারের কাছে যত দ্রুত সম্ভব ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন।
সেনাসদস্যদের দিকনির্দেশনা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
তিনি সেনাসদস্যদের অর্পিত দায়িত্ব সর্বোচ্চ সততা, কর্তব্যপরায়ণতা ও আনুগত্যের সঙ্গে পালনের নির্দেশ দেন। তিনি জানান, নির্বাচিত সরকার গঠনের পর সেনাবাহিনীকে দ্রুত ব্যারাকে ফিরিয়ে নেয়া হবে। তা না হলে দেশের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাপনা ঝুঁকির মুখে পড়বে।
মজলুমদের প্রতি সহানুভূতি ও মানবিক দায়িত্ব
এক অফিসারের প্রশ্নে সেনাপ্রধান বলেন, “মজলুমদের অশ্রুজল যাতে না ঝরে,” এবং তাদের অধিকার রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে সেনাসদস্যদের নির্দেশ দেন।
সবশেষে সেনাপ্রধান সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে দেশের প্রতি আনুগত্য ও দায়িত্ব পালনে অবিচল থাকার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, যদি সেনাবাহিনী নিজের আদর্শ ও অবস্থানে অবিচল থাকে, তবে কোনো মহলই তাদের ক্ষতি করতে পারবে না।