দেশের চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে ২০০৭ সালের এক-এগারো সরকারের সময়ের সঙ্গে তুলনা করে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন নাট্যকার ও কলাম লেখক অদিতি করিম (Aditi Karim)। তার মতে, সরকারে থাকা একটি গোষ্ঠী সুপরিকল্পিতভাবে দেশে অরাজকতা তৈরি করে আরেকটি ‘এক-এগারো’র মতো পরিস্থিতি আনার চেষ্টায় আছে।
উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ও অস্বচ্ছ পরিস্থিতি
২০ মে রাতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে সেনাপ্রধান (Army Chief)সহ তিন বাহিনীর প্রধান এবং সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের বিষয়ে একমাত্র প্রেস বিবৃতি ছাড়া বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। লেখক বলছেন, এমন বৈঠকগুলো অতীতেও এক-এগারোর আগে দেখা গিয়েছিল।
অরাজকতা ও মব সন্ত্রাস
লেখকের মতে, দেশ বর্তমানে একটি চরম অরাজক পরিস্থিতির মুখে দাঁড়িয়ে। রাজপথে চলছে সহিংসতা, মব সন্ত্রাস, রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধ, পেশাজীবীদের অবরোধ ও আইনবহির্ভূত কর্মকাণ্ড। গ্রেপ্তার আসামিদের থানা থেকে ছাড়িয়ে নেওয়া, আইনি প্রক্রিয়া উপেক্ষা করে মামলা দিয়ে হয়রানি, মিডিয়া ট্রায়াল—সব মিলিয়ে দেশে ‘তা ব’ চলছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
‘এক-এগারো’র ছায়া
অদিতি করিম মনে করেন, পরিস্থিতি অনেকটাই ২০০৬ সালের শেষ দিকের মতো। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংঘাত উসকে দিয়ে, ব্যবসাবাণিজ্য অচল করে, মিডিয়ায় বিভ্রান্তিকর প্রচারণা চালিয়ে পরিকল্পিতভাবে অস্থিরতা তৈরি করা হচ্ছে। সে সময় ড. ফখরুদ্দীন আহমদ (Fakhruddin Ahmed) নেতৃত্বে এক-এগারো সরকার ক্ষমতা দখল করেছিল—লেখকের আশঙ্কা, এবারও যেন একই ছকের পুনরাবৃত্তি না ঘটে।
অর্থনীতি ধ্বংসের ষড়যন্ত্র
লেখক দাবি করেন, ২০০৭ সালের মতো এবারও দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র চলছে। উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধে মামলা, মিডিয়া ট্রায়াল, বিদেশি ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ানো, ব্যাংকিং খাতে আস্থাহীনতা তৈরি—সবই এক-এগারোর পুরনো কৌশলের পুনরাবৃত্তি।
বিশেষ করে ১০টি ব্যাংককে দেউলিয়া ঘোষণার প্রস্তুতি, আইএমএফের শর্তে ডলার ছেড়ে দেওয়া এবং হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হওয়ার ঘটনাগুলো এই চক্রান্তের অংশ বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।
বিদেশ নির্ভর সুশীল শাসনের চেষ্টা?
লেখক আরও দাবি করেন, ২০০৭ সালের মতো এবারও ‘সুশীল শাসনের’ স্বপ্নে বিভোর একটি মহল ক্ষমতা ধরে রাখার পাঁয়তারা করছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus) নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে থাকা কিছু ব্যক্তি রাজনৈতিক বিরাজনীতিকরণের চেষ্টায় লিপ্ত।
মানবিক করিডর, চট্টগ্রাম বন্দর ও সেন্টমার্টিন প্রশ্ন
লেখক প্রশ্ন তুলেছেন, কেন বর্তমান সরকার মানবিক করিডর (Humanitarian Corridor), চট্টগ্রাম বন্দর (Chattogram Port) এবং সেন্টমার্টিন (Saint Martin) ইস্যুতে এত আগ্রহী, যেখানে আসল প্রয়োজন হলো একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। এসব ইস্যু দেশের জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী এবং জনগণের দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে দেওয়ার কৌশল বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
সেনাবাহিনীর প্রতি আস্থা ও নির্বাচনই একমাত্র উপায়
লেখকের মতে, দেশের একমাত্র আশার আলো এখন সশস্ত্র বাহিনী (Armed Forces)। সেনাবাহিনী এখনো রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ থেকে দূরে থেকে জনগণের স্বার্থে কাজ করছে। তবে এর মধ্যেও একটি মহল সেনাবাহিনীর নিরপেক্ষ অবস্থানকে টার্গেট করে দেশকে ষড়যন্ত্রের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
সেজন্য তিনি জোর দিয়ে বলেন, নির্বাচনই একমাত্র পথ। যদি আরেকটি এক-এগারোর ফাঁদে পড়ে দেশ, তাহলে তা রাজনীতি, অর্থনীতি ও জাতির ভবিষ্যৎ ধ্বংস করে দেবে।