প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus) এখন এক কঠিন রাজনৈতিক দ্বিধাদ্বন্দ্বে। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে তার সামনে এখন দুটি পথ— হয় পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে থেকে দায়িত্ব পালন, না হয় পদত্যাগ করে রাজনীতি থেকে বিদায়।
সেনাবাহিনীর সঙ্গে মতবিরোধ তীব্র
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান (Waker-Uz-Zaman) সরকারের কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে মতপার্থক্যের কথা স্পষ্ট করেছেন। তিনি সকল পর্যায়ের সেনা কর্মকর্তাদের বলেছেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হতে হবে।
এদিকে ইউনূস জুন পর্যন্ত সময়সীমার কথা বলে নির্বাচনকে অনিশ্চিত করে তুলেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তার উপদেষ্টারা বিষয়টি ঘোলাটে করেছেন এবং জাতিকে বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলেছেন।
মানবিক করিডোর ও চট্টগ্রাম বন্দর ইস্যুতে বিতর্ক
রাখাইনের জন্য প্রস্তাবিত মানবিক করিডোর নিয়েও ইউনূস সরকার ভিন্ন বার্তা দিয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিবকে এনে করিডোর বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও সেনাপ্রধান স্পষ্টভাবে বলছেন— “কোনো করিডোর নয়।”
চট্টগ্রাম বন্দরকেও বিদেশিদের কাছে তুলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ইউনূস সরকারের বিরুদ্ধে।
উপদেষ্টা পরিষদের আভ্যন্তরীণ সংকট
বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদকে বিতর্কিত আখ্যা দিয়ে এনসিপি (NCP) দাবি তুলেছে, অন্তত তিনজন উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে হবে— ড. সালেহউদ্দিন, ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এবং ড. আসিফ নজরুল ([Salehuddin, Wahiduddin Mahmud, Asif Nazrul])।
অন্যদিকে বিএনপি (BNP) বলছে, এনসিপি ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া এবং মাহফুজ আলম–কেও পদত্যাগ করতে হবে।
সেনাবাহিনীর হতাশা ও জেনারেল ওয়াকারের খোলামেলা অবস্থান
সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরে হতাশা বাড়ছে। ওয়াকার নিজেও বলেছেন, নির্বাচনের জন্য ১৮ মাসের সময়সীমা পেরিয়ে যাচ্ছে। অথচ ইউনূস এই বিষয়ে নিরব থেকেছেন। বরং, তার উপদেষ্টারা এক ধরনের ক্ষমতালোভী ও কূটনৈতিক বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি কেউ কেউ বলছেন, তারা দেশের নাম পরিবর্তনের চিন্তাও করেছিলেন!
রাজনীতির ভবিষ্যৎ কোন পথে?
বিশ্লেষকরা বলছেন, এখন বল ইউনূসের কোর্টে নেই— সেটা সেনাপ্রধান এবং জনগণের হাতে। তিনি চাইলে এখনো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে নিজের মর্যাদা রক্ষা করতে পারেন। না হলে রাজনীতির দৃশ্যপট থেকে বিদায় নিতে হতে পারে। অতীতে তিনি রাজনৈতিক দল গঠন করে আবার নিজেই দল বিলুপ্ত করেছিলেন।
দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি উদ্বেগজনক
দেশে অর্থনীতি সংকটে, বিনিয়োগ নেই, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। জনগণ একসময় পরিবর্তনের পক্ষে ছিল, কিন্তু এখন তারা সরকারের অস্তিত্ব নিয়েই প্রশ্ন তুলছে।
বিএনপি নির্বাচন রোডম্যাপ ঘোষণার জোর দাবি জানিয়েছে। তবে সরকারের দিক থেকে এখনো সুস্পষ্ট বার্তা নেই।
ঐতিহাসিক ভূমিকার পরিণতি
যত সমালোচনাই থাকুক, প্রফেসর ইউনূস এবং জেনারেল ওয়াকার উভয়ে অভ্যুত্থানের সময় ইতিহাস গঠনে ভূমিকা রেখেছেন। সেনাবাহিনীর দৃঢ় অবস্থান ছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হতো না। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মহলে ইউনূসের ভাবমূর্তি দেশের জন্য কিছুটা ভারসাম্য এনেছে। কিন্তু উপদেষ্টাদের অদূরদর্শী কূটচাল পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে।
এখন কী করবেন ইউনূস?
সবার প্রশ্ন— “প্রফেসর ইউনূস এখন কী করবেন?” তিনি কি নির্বাচনের পথে হাঁটবেন, না রাজনীতিকে বিদায় জানাবেন?
সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত না নিলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ফের বিশৃঙ্খলায় পড়বে। অভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর ঐক্য না থাকলে পরাজিত পুরনো শক্তি ফিরে আসতে পারে।