যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (এনসিএ) (National Crime Agency – NCA) বাংলাদেশের (Bangladesh) ক্ষমতাচ্যুত শাসক শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)–র ঘনিষ্ঠ দুই ব্যক্তির বিলাসবহুল সম্পত্তি জব্দ করেছে। জব্দ হওয়া সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৯০ মিলিয়ন পাউন্ড, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ হাজার ৪৭৯ কোটি টাকা। এই দুই ব্যক্তি হলেন সালমান এফ রহমান (Salman F Rahman)–এর ছেলে আহমেদ শায়ান রহমান ও ভাতিজা আহমেদ শাহরিয়ার রহমান।
লন্ডনের বিলাসবহুল সম্পত্তিতে ফ্রিজিং অর্ডার
দ্য গার্ডিয়ান (The Guardian)–এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এনসিএ নয়টি ফ্রিজিং অর্ডার জারি করেছে। এই আদেশের আওতায় সম্পত্তিগুলো বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। জব্দ সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে লন্ডনের গ্রোসভেনর স্কোয়ারের অ্যাপার্টমেন্ট এবং উত্তর লন্ডনের গ্রেশাম গার্ডেন্স–এ অবস্থিত বাড়ি।
এই সম্পত্তিগুলোর মালিকানা গোপন রাখতে ব্যবহার করা হয়েছে ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড (British Virgin Islands), আইল অব ম্যান (Isle of Man) ও জার্সি ভিত্তিক কোম্পানি। মূল্য পরিসীমা ১.২ মিলিয়ন থেকে ৩৫.৫ মিলিয়ন পাউন্ড।
সালমান এফ রহমান ও তার পরিবারের বিতর্কিত সম্পৃক্ততা
বেক্সিমকো (Beximco) করপোরেট সাম্রাজ্যের মালিক সালমান এফ রহমান শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন এবং বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের সময় তিনি দেশ ছাড়ার চেষ্টা করেন এবং পরবর্তীতে আনিসুল হক (Anisul Haque) সহ গ্রেপ্তার হন।
সালমান এফ রহমান ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে দেশে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত চলছে। ২০২৪ সালে দ্য গার্ডিয়ান ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (Transparency International)–এর যৌথ অনুসন্ধানে তার ছেলে ও ভাতিজার মালিকানাধীন ৪০০ মিলিয়ন পাউন্ডের সম্পদের তথ্য উঠে আসে।
টিউলিপ সিদ্দিকের সম্পৃক্ততা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
এনসিএ’র জব্দ করা দুটি বাড়ির মধ্যে একটি বাড়িতে শেখ রেহানা (Sheikh Rehana) বসবাস করতেন, যিনি শেখ হাসিনার বোন এবং টিউলিপ সিদ্দিক (Tulip Siddiq)–এর মা। টিউলিপ যুক্তরাজ্যের সাবেক সিটি মিনিস্টার ছিলেন এবং বর্তমানে তার বিরুদ্ধেও বাংলাদেশে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি পদত্যাগ করেছেন।
এনসিএ ও আইনজীবীদের প্রতিক্রিয়া
এনসিএ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, এটি চলমান দেওয়ানি তদন্ত–এর অংশ। দ্য গার্ডিয়ান মন্তব্যের জন্য আহমেদ শায়ান রহমান ও আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কোনো সাড়া মেলেনি।
তবে ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে দেয়া এক বিবৃতিতে আহমেদ শায়ান রহমানের মুখপাত্র বলেছেন, “আমাদের মক্কেল কোনো অন্যায়ের সঙ্গে জড়িত নন। তিনি তদন্তে অংশ নিতে আগ্রহী।”
তারা আরও বলেন, “বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতায় শত শত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হচ্ছে। আমরা আশা করি যুক্তরাজ্যের কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবে।”