কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বহাল থাকছে, বাড়ছে করহার: বাজেট চূড়ান্ত করেছে এনবিআর

অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণার পরও ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ বহাল রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) (NBR)। তবে এবার সুযোগটি শুধু স্থাপনা, ফ্ল্যাট, বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, জমি ও ফ্লোর স্পেস কেনার ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে এবং করহার সর্বোচ্চ সাত গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে।

উপদেষ্টাদের ঘোষণা ও বাস্তবতা

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ (Dr. Salehuddin Ahmed)সহ সরকারের উপদেষ্টারা বারবার বলেছেন, ভবিষ্যতে কালো টাকা বৈধ করার কোনো সুযোগ থাকবে না। কিন্তু বাস্তবে এনবিআর কালো টাকা সাদা করার বিধান রেখেই বাজেট প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে, যা আগামী ২ জুন ঘোষণা করা হবে।

অতীতে কালো টাকার হিসাব ও ব্যর্থতা

স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে ৪০ বছরে ২২ বার কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে মাত্র ৪৭ হাজার কোটি টাকা বৈধ হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ২০,৬৫০ কোটি টাকা সাদা করা হয় ২০২০-২১ অর্থবছরে।

বিশেষজ্ঞদের সমালোচনা

দুদক সংস্কার কমিশনটিআইবি–এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এটি অসাংবিধানিক ও দুর্নীতিকে উৎসাহিত করে। সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদের পরিপন্থী এই ব্যবস্থা সমাজে বৈষম্য সৃষ্টি করে।

মঈদুল ইসলাম, দুদকের সাবেক মহাপরিচালক, বলেন, কালো টাকা সাদা করার মাধ্যমে দুর্নীতিবাজরা ছাড় পায় এবং বৈধতার প্রশ্ন তোলা যায় না—এটি সংবিধানের লঙ্ঘন।

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার করহার

গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি, মতিঝিল, শাহবাগ, রমনা, পল্টন, তেজগাঁওসহ ঢাকার অভিজাত এলাকাগুলোয় জমির জন্য প্রতি বর্গমিটারে কর ১৫ হাজার টাকা ও স্থাপনায় ৬ হাজার টাকা। অন্যান্য এলাকাগুলোয় জমির কর ১০ হাজার টাকা এবং স্থাপনার কর ৩,৫০০ টাকা। বাজেটে এসব হার বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে।

অসামঞ্জস্য মূল্য ও সরকারি কর্মকর্তাদের সম্পদ

ঢাকার অভিজাত এলাকায় অ্যাপার্টমেন্টের প্রকৃত দাম ২০-৩০ কোটি টাকা হলেও দলিলে তা দেখানো হয় ১-২ কোটি টাকা। অনেক সরকারি কর্মকর্তা এইসব এলাকায় ফ্ল্যাট কিনছেন, যা তাদের বৈধ আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

রিহ্যাব ও এনবিআরের ভিন্নমত

রিহ্যাব–এর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর পুরোপুরি কালো টাকা সাদা করার বিধান বাতিল করতে না পারলেও করহার বাড়িয়ে তা নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা করছে।

নতুন ভ্যাট ও শুল্ক বৃদ্ধি

প্লাস্টিকের কিচেনওয়্যার ও টেবিলওয়্যারে ১৫% ভ্যাট বসছে। সিগারেট পেপারে বাণিজ্যিক আমদানিতে এসডি ১৫০% থেকে বাড়িয়ে ৩০০% করা হচ্ছে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল আমদানিতে পূর্বের মতো ১০০% এসডি বহাল থাকবে। এনবিআর সূত্র বলছে, বাণিজ্যিক আমদানির হিসাব না পাওয়ায় এই উদ্যোগ।