বিএনপি (BNP)-র স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় (Goyeshwar Chandra Roy) অভিযোগ করেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Muhammad Yunus) ক্ষমতায় থাকার উদ্দেশ্যে মৌলবাদী শক্তিকে একত্রিত করেছেন। রোববার (২৫ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ অভিযোগ করেন।
‘মৌলবাদীদের একত্রিত করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাচ্ছেন’
গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, “আমরা ন্যাশনালিস্ট পার্টি (Nationalist Party)। আজকে জাতীয়তাবাদী শক্তির সঙ্গে সমাজ ও পুঁজিবাদী অর্থনীতির দ্বন্দ্ব চলছে। এই পরিস্থিতিতে ড. ইউনূস মৌলবাদীদের একত্র করে দিয়েছেন শুধুমাত্র ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য।” তিনি আরও বলেন, “পৃথিবীতে যে শক্তিকে আপনি সন্তুষ্ট করতে চান, সেই দেশটাই মৌলবাদী জন্ম ও পৃষ্ঠপোষক—যেমন যুক্তরাষ্ট্র।”
সরকারবিরোধী ঐক্য ও আন্দোলনের প্রসঙ্গ
আলোচনার সময় গয়েশ্বর চন্দ্র বলেন, “যারা এখানে উপস্থিত, তারা বিভিন্ন দলের হলেও আমাদের কণ্ঠস্বর এক। আমরা যদি কাল রাস্তায় নামি, তাহলে ইউনূস সাহেব টিকতে পারবেন না।”
তবে তিনি এটাও বলেন, “আমরা চাই, ড. ইউনূস সফল হোক। ওনার সফলতা মানেই আমাদের আন্দোলনের সাফল্য।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের নিয়ে প্রশ্ন
বিএনপি নেতা প্রশ্ন তোলেন, “বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন যারা করছে, তারা কেন প্রতিদিন সচিবালয়, ডিসি অফিস, এসপি অফিসে যায়? তারা রাজনৈতিক আন্দোলন না করে প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় জড়িত হচ্ছে কেন?” তিনি ব্যঙ্গ করে বলেন, “আমার নাতনী—নিপুণ রায় চৌধুরীর মেয়ে—ইনহেরাল্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে পড়ে। লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত, তাকে তো রাজনীতিতে আনা যাবে না।”
নির্বাচন ও ইউনূসের পদত্যাগের গুজব
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (Communist Party of Bangladesh)-র সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স (Ruhin Hossain Prince) বলেন, “ভোটের কথা বললে কিছু মানুষের যন্ত্রণা হয় কেন বুঝি না।” তিনি অভিযোগ করেন, ড. ইউনূসের কার্যক্রমে স্বৈরশাসকের ছায়া ফুটে উঠেছে।
তিনি আরও বলেন, “ভালো সংস্কার ও নির্বাচন চাইলে ডিসেম্বরের আগেই নির্বাচন সম্ভব। কিন্তু এখন এমনভাবে দরজা খোলা হচ্ছে যে দেশবিরোধী শক্তিগুলো সুযোগ নিতে পারে।”
চট্টগ্রাম বন্দর ইস্যুতে উদ্বেগ
আলোচনায় চট্টগ্রাম বন্দর (Chattogram Port) বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান জানানো হয়। বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (Bangladesh Liberal Democratic Party)-র একাংশের সভাপতি শাহাদাত হোসেন সেলিম (Shahadat Hossain Selim) বলেন, “দুবাই পোর্ট ওয়ার্ল্ড এলেও তারা কোনো কাজে আসবে না। এটা শুধুই ষড়যন্ত্র।”
ইউনূসের পদত্যাগ নিয়ে বিভ্রান্তি
গণ অধিকার পরিষদ (Gono Odhikar Parishad)-র সভাপতি নুরুল হক নূর (Nurul Haque Nur) বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করবেন বলে যেসব সংবাদ ছড়ানো হচ্ছে তা বিভ্রান্তিমূলক।” তিনি বলেন, “ড. ইউনূসের মন্ত্রিসভায় কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব নেই, যা রাষ্ট্র পরিচালনায় যথাযথ নয়।”
ইশরাক হোসেনের শপথ না দেয়ার অভিযোগ
নূর অভিযোগ করে বলেন, “ইশরাক হোসেন (Ishraq Hossain)কে আদালত মেয়র ঘোষণা করলেও তাকে শপথ নিতে দেয়া হয়নি, কারণ এক উপদেষ্টা সেখানে তার নিজের লোক বসিয়েছেন।”
অন্যান্য নেতৃবৃন্দের বক্তব্য
সভায় সভাপতিত্ব করেন সৈয়দ এহসানুল হুদা (Syed Ehsanul Huda) এবং সঞ্চালনায় ছিলেন বিএলডিপির মহাসচিব তমিজ উদ্দিন টিটু। বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) (Jatiya Party (Kazi Zafar))-র চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি (Revolutionary Workers Party)-র সাইফুল হক, এবি পার্টি (AB Party)-র সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জু, জাসদ (JASAD)-র সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান এবং বাসদ (BASAD)-এর বজলুর রশীদ ফিরোজ প্রমুখ।