স্বৈরাচার পতনের ছিদ্র রুদ্ধ করতে পারে না: কুলাউড়ায় জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী (Jamaat-e-Islami Bangladesh)-এর আমীর ডা. শফিকুর রহমান (Dr. Shafiqur Rahman) বলেছেন, “স্বৈরাচার সকল ছিদ্র বন্ধ করলেও তার পতনের ছিদ্র বন্ধ করতে পারে না।” তিনি বলেন, “তারা সাড়ে ১৫ বছরে গুম, হত্যা, লুণ্ঠন, আয়নাঘর, বিদেশে অর্থ পাচার করে রাজকীয় অট্টালিকা ও বেগম পাড়া গড়েছে।”

রবিবার (২৫ মে) দুপুরে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত জামায়াতের ওয়ার্ড দায়িত্বশীল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

“আওয়ামী লীগ পশুর মতো আচরণ করেছে”—ডা. শফিকুর রহমান

তিনি অভিযোগ করে বলেন, “আওয়ামী লীগ মানুষকে মানুষ মনে করত না। পশুর মতো আচরণ করেছে। অবশেষে তারা বিদেশে পালিয়ে গেছে এবং তাদের নেতাকর্মীদের কিছু না বলেই পালিয়েছে।” তিনি বলেন, “তারা দেশে কারও শান্তিপূর্ণ বসবাসের অধিকার দেয়নি, সীমাহীন জুলুম করেছে। তবে জামায়াত সব সময় অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার ছিল।”

তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি মন্তব্য উদ্ধৃত করে বলেন, “সবাই পায় সোনার খনি, আমি পেয়েছি চোরের খনি। আমার আশেপাশে শুধু চোর।”

দুর্নীতি ও বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার প্রতিশ্রুতি

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “আমরা চাই বৈষম্যহীন বাংলাদেশ। যেখানে মানুষ শান্তিতে খাবে, দুর্নীতিবাজদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে।” তিনি বলেন, “গরু-ছাগল চোরদের যেমন ঘৃণা করি, কলমচোর—যারা রাষ্ট্রের হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করে—তাদের প্রতিও ঘৃণা থাকা উচিত।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা ধর্ম বা পেশা দেখে কাউকে মূল্যায়ন করি না। শত নির্যাতনের মধ্যেও কর্মীদের ধৈর্য ধরতে হবে।”

যুবকদের প্রতি আহ্বান: “দেশের প্রতিটি ঘর ইসলামী আন্দোলনের ঘাঁটি হোক”

যুবকদের উদ্দেশ্যে জামায়াত আমির বলেন, “বিশ্বে যত কল্যাণকর কাজ হয়েছে, তা যুবকদের হাত ধরেই। আমাদের বিশ্রামের সময় নেই—দেশের প্রতিটি ঘরকে ইসলামী আন্দোলনের ঘাঁটি বানাতে হবে। বিশ্রাম পাব জান্নাতুল ফেরদাউসে, যদি আল্লাহ কবুল করেন।”

বিশেষ অতিথিরা ও দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা জামায়াতের আমীর ইঞ্জিনিয়ার শাহেদ আলী এবং সঞ্চালনা করেন সেক্রেটারি মো. ইয়ামীর আলী।
বিশেষ অতিথির মধ্যে ছিলেন:
– সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের
– সিলেট মহানগর জামায়াত আমীর মো. ফখরুল ইসলাম
– জেলা নায়েবে আমীর মাওলানা আব্দুর রহমান
– মৌলভীবাজার-১ আসনের মনোনীত প্রার্থী মাওলানা আমিনুল ইসলাম
– অ্যাডভোকেট আব্দুর রব, হাফেজ মাওলানা তাজুল ইসলাম, আব্দুল কুদ্দুস নোমান প্রমুখ

চা-শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে বক্তব্য

এর আগে কুলাউড়া উপজেলা জামায়াত আয়োজিত চা-শ্রমিক সমাবেশে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “চা-শ্রমিকরা এখনও মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। আমরা দায়িত্ব পেলে তাদের সম্মানের সঙ্গে বসবাস ও সন্তানের প্রতিভা বিকাশ নিশ্চিত করব।”

তিনি বলেন, “চা-শ্রমিকদের শিক্ষিত করে আধুনিক বাগান ব্যবস্থাপনায় যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। ধর্ম নয়—আমরা মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখি। কেউ যেন ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্ত না হয়।”

চা-শ্রমিক সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা জামায়াতের আমীর আব্দুল মুন্তাজিম।
অতিথিদের মধ্যে ছিলেন:
– অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের
– জেলা আমীর প্রকৌশলী এম. সায়েদ আলী
– অধ্যক্ষ ইয়ামীর আলী
– মনোনীত প্রার্থী মাওলানা আমিনুল ইসলাম (বড়লেখা-জুড়ী), অ্যাডভোকেট আব্দুর রব (শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ)
– খন্দকার আব্দুস সোবহান, প্রভাষক হামিদ খান, বেলাল আহমদ চৌধুরী ও ছাত্রশিবির সভাপতি মো. নিজাম উদ্দিন

করিডোর ও জাতীয় স্বার্থ বিষয়ে অবস্থান

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “মানবিক করিডোর হোক বা সমুদ্রবন্দর—জাতীয় স্বার্থের বিরোধী কিছু হলে আমরা ‘না’ বলব।” তিনি বলেন, “করিডোর ইস্যুতে এখনই সিদ্ধান্ত নয়, বরং নির্বাচিত সরকার ও সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”

“নির্বাচন হবে ইতিহাস গড়া”—প্রধান উপদেষ্টার বার্তা তুলে ধরলেন

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন—নির্বাচন হবে ইতিহাস গড়া। জনগণ হাসিমুখে ভোট দেবে, কেউ বলবে না তার ভোট আরেকজন দিয়েছে।”

কর্মসূচির পরবর্তী ধাপ

তিনি জানান, কুলাউড়ার বিভিন্ন স্থানে আরও পাঁচটি পথসভায় তিনি বক্তব্য দেবেন।