কোরবানির মৌসুমে ভারতকে ছাড়িয়ে গরু উৎপাদনে শীর্ষে বাংলাদেশ

এই বছরের ঈদুল আযহায় কোরবানির জন্য বাংলাদেশ (Bangladesh)-এ আমদানি বা চোরাইপথে গরু প্রবেশের প্রয়োজন নেই—এমন তথ্য জানিয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে, এবছর প্রায় ১ কোটি ২৫ লাখ পশুর চাহিদা স্থানীয়ভাবে পূরণ সম্ভব।

ভারতীয় গরুর বয়কট এবং তার প্রভাব

এই উদ্যোগের ফলে বন্ধ হয়ে গেছে সীমান্ত-নির্ভর ভারতীয় গরুর প্রবাহ। এর প্রভাব পড়েছে ভারত (India)র পশু-ভিত্তিক কৃষি অর্থনীতিতে। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal), বিহার (Bihar), ঝাড়খণ্ড (Jharkhand) ও আসাম (Assam) রাজ্যে প্রায় ৩০ লাখ গরু অবিক্রীত রয়ে গেছে। শুধু পশ্চিমবঙ্গেই আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮ হাজার কোটি রুপি।

২০১৪ সালে ভারতের মোদি সরকার ‘কাউ প্রোটেকশন’ নীতির আওতায় গরু জবাই নিষিদ্ধ করে। এর দীর্ঘমেয়াদি প্রতিক্রিয়ায় ২০২৫ সালে এসে বাংলাদেশ আমদানি বন্ধ করলে ভারতে গরু হয়ে দাঁড়ায় বোঝা।

দেশীয় উৎপাদনের বিপ্লব

চুয়াডাঙ্গা (Chuadanga), রাজশাহী (Rajshahi), সিরাজগঞ্জ (Sirajganj), কুষ্টিয়া (Kushtia)সহ অন্তত ৩০টি জেলায় গড়ে উঠেছে খামারভিত্তিক গরু উৎপাদন কেন্দ্র। লক্ষাধিক খামারি এখন অনলাইন হাটের মাধ্যমে গরু বিক্রি করছেন এবং পাচ্ছেন ডিজিটাল স্বাস্থ্যসনদ ও মূল্য যাচাইয়ের সুবিধা।

রপ্তানির নতুন দিগন্ত

দেশীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাংলাদেশ এখন আন্তর্জাতিক বাজারেও প্রবেশ করছে। চট্টগ্রাম বন্দর (Chattogram Port) থেকে সৌদি আরব (Saudi Arabia), মালয়েশিয়া (Malaysia) ও ওমান (Oman)-এ রপ্তানির দুটি চুক্তি ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। পাশাপাশি চীন (China)সহ আরও কয়েকটি দেশের সঙ্গে হালাল মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ সংক্রান্ত আলোচনা চলছে।

সরকারের লক্ষ্য—২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ গরু রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে গড়ে তোলা। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) এবং আন্তর্জাতিক পশু স্বাস্থ্য সংস্থা (International Animal Health Organization) মনে করছে—বাংলাদেশ এই গতি অব্যাহত রাখলে ২০২৭ সালের মধ্যে ৫০০ মিলিয়ন ডলার আয় করা সম্ভব।

কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক বার্তা

বিশ্লেষকদের মতে, এটি শুধু অর্থনৈতিক অর্জন নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের একচেটিয়া বাজার হারানোর স্পষ্ট ইঙ্গিত। বাংলাদেশ এখন শুধু গরু নয়, বরং ধাপে ধাপে ভারতীয় পণ্য—যেমন পেঁয়াজ, আলু, রসুন, ওষুধ ও নির্মাণসামগ্রীর বিকল্প উৎসও খুঁজে নিচ্ছে।

বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে—সঠিক পরিকল্পনা, প্রযুক্তির ব্যবহারে এবং স্বনির্ভর উৎপাদনে একটি খামার নয়, বরং গোটা অর্থনীতি দাঁড় করানো সম্ভব।