প্রতিবেশীরা সীমান্তে গ্যাস তুলছে, অথচ বাংলাদেশে চলছে ভয়াবহ সংকট

বাংলাদেশ (Bangladesh) জুড়ে গ্যাস সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। বাসাবাড়ি, কলকারখানা ও পরিবহন খাতে দেখা দিয়েছে মারাত্মক ব্যাঘাত। সিএনজি স্টেশনগুলোতে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও পর্যাপ্ত চাপ পাচ্ছেন না চালকরা। অনেক গৃহিণী দিনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত চুলায় গ্যাস না পেয়ে রান্না করতে পারছেন না।

পরিকল্পনার ব্যর্থতা ও আমদানিনির্ভরতা

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের ভুল পরিকল্পনা ও অবহেলার কারণে এই সংকটের জন্ম হয়েছে। প্রতিদিনের গ্যাস চাহিদা যেখানে প্রায় ৪০০০ মিলিয়ন ঘনফুট, সেখানে সরবরাহ হচ্ছে ৩০০০ মিলিয়নেরও কম।

২০১৪ সালের পর সরকার ‘দেশে গ্যাস নেই’ প্রচার করে আমদানিনির্ভরতা গড়ে তোলে। ২০১৬-১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিলারেট এনার্জি (Excelerate Energy), ভারত (India)’র পেট্রোনেট (Petronet) ও বাংলাদেশের সামিট গ্রুপ (Summit Group) এর সঙ্গে এলএনজি আমদানির চুক্তি হয়। এর ফলে দেশীয় গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন কার্যক্রম প্রায় বন্ধ হয়ে পড়ে।

২০১৭ সালে পাবনা (Pabna)’র মোবারকপুর (Mobarakpur) গ্যাসক্ষেত্র পরিত্যক্ত ঘোষণা করার পর অনুসন্ধান কার্যক্রম প্রায় সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।

প্রতিবেশীদের অগ্রগতি, বাংলাদেশের স্থবিরতা

ত্রিপুরা (Tripura) ও পশ্চিমবঙ্গ (West Bengal)—এই দুই ভারতীয় রাজ্য এবং মিয়ানমার (Myanmar) সীমান্তবর্তী সু গ্যাস ফিল্ড থেকে সফলভাবে গ্যাস উত্তোলন করছে প্রতিবেশীরা। মিয়ানমার নিজেদের এক-তৃতীয়াংশ গ্যাস চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি চীন (China) ও থাইল্যান্ড (Thailand)-এ গ্যাস রপ্তানি করছে।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ এখনো বঙ্গোপসাগর (Bay of Bengal)’র সম্ভাবনাময় এসএস-১১ (SS-11) ও ডিএস-১২ (DS-12) ব্লকগুলো কাজে লাগাতে পারেনি। কার্যক্রম এখনো দরপত্র আহ্বানে সীমাবদ্ধ।

সমাধান কোথায়?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের বদ্বীপ অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ গ্যাস ও তেলের সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও তা অনুসন্ধান করা হয়নি। স্থলভাগের মাত্র ১০ শতাংশ এলাকায় অনুসন্ধান হয়েছে, বাকিটুকু এখনো অনাবিষ্কৃত।

দেশীয় উৎপাদন কমিয়ে আমদানির ওপর নির্ভরতা বাড়লে জ্বালানি খাত ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন তারা। এখনই প্রয়োজন সমন্বিত জ্বালানি নীতি ও স্বনির্ভর অনুসন্ধান কাঠামো।

ভোগান্তির শেষ নেই

এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে বারবার সংকট সমাধানের আশ্বাস মিললেও বাস্তবে কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার এবং এর প্রভাব পড়ছে জাতীয় অর্থনীতিতে।