সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান (Waqar Uz Zaman)’র সাম্প্রতিক বক্তব্য ঘিরে দেশের রাজনীতি চরম উত্তেজনায় উত্তাল। গত ২১ মে ঢাকা সেনানিবাস (Dhaka Cantonment)-এ অফিসার্স অ্যাড্রেসে তিনি নির্বাচন, করিডোর, বন্দরসহ নানা বিষয়ে দিকনির্দেশনামূলক মন্তব্য করেন।
সেনাপ্রধানের বক্তব্য: জাতীয় স্বার্থ না ব্যক্তিগত ক্ষমতা?
তিনি বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হওয়া উচিত এবং করিডোর-বন্দর ইস্যুতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমেই। চট্টগ্রাম বন্দরের (Chattogram Port) দায়িত্ব বিদেশিদের হাতে না দেওয়ার আহ্বানও জানান তিনি।
তবে এই বক্তব্যকে অনেকে বিএনপি (BNP)’র অবস্থানের সঙ্গে মিলিয়ে দেখছেন, আবার কেউ এটিকে শৃঙ্খলাবিরোধী বলেও আখ্যা দিয়েছেন। ভারতের মিডিয়ায় এটিকে ‘ক্যু’র পূর্বাভাস হিসেবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। সাবেক সেনাপ্রধান আইকেবি সতর্ক করেন—“১/১১-এর পুনরাবৃত্তি আর দেখতে চাই না।”
রাজপথে চাপ, রাজনীতিতে উত্তেজনা
ইশরাক (Ishraq)’কে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র হিসেবে শপথ দেওয়ার দাবিতে নগর ভবন ঘেরাও ও তালা এবং ছাত্রদল (Chhatra Dal) কর্মী সাম্য হত্যার বিচার দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (University of Dhaka) ও শাহবাগ (Shahbagh) এলাকায় বিক্ষোভে উত্তাল হয় রাজধানী।
এর মধ্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus) ক্ষুব্ধ হয়ে উপদেষ্টা পরিষদে জানান, বিএনপি যদি রাজপথে এই চাপ বন্ধ না করে, তিনি পদত্যাগ করবেন। এরপর যমুনা (Jamuna) এলাকায় একাধিক বৈঠকে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী (Jamaat-e-Islami) ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (National Citizen Party) ইউনূসের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানায়।
ভারতের চাপ: বাণিজ্য থেকে সীমান্তে পুশ-ইন
ভারত (India) বাংলাদেশের ওপর কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিকভাবে চরম চাপ সৃষ্টি করছে। চ্যাংড়াবান্ধা (Changrabandha) ও ফুলবাড়ী (Fulbari) স্থলবন্দরসহ আসাম (Assam), মেঘালয় (Meghalaya), ত্রিপুরা (Tripura) ও মিজোরাম (Mizoram) সীমান্ত দিয়ে রপ্তানি বন্ধ ও ‘পুশ ইন’ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ ইউনূস সরকারকে নড়বড়ে করার কৌশলে লিপ্ত। একজন ভারতীয় কূটনীতিক সাংবাদিককে বলেন, “আরেকটু ধাক্কা দিলেই ইউনূস সরকার পড়ে যাবে।”
অবস্থান স্পষ্ট করলেন ইউনূস
ড. ইউনূস ঘোষণা দিয়েছেন, নির্বাচন জুন ২০২৬’র মধ্যে হবেই। যদি রাজনৈতিক দলগুলো দায়িত্বশীল আচরণ না করে, তাহলে তিনি আর সরকার চালাবেন না।
তাকে আটকাতে উদ্যোগ নিয়েছে রাজনৈতিক ও নাগরিক সমাজ। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া (Khaleda Zia) তার সঙ্গে শিগগিরই ফোনে কথা বলবেন। লন্ডন থেকে তারেক রহমান (Tarique Rahman)-ও কথা বলতে পারেন।
“দিল্লি না ঢাকা”—ছাত্রদের স্লোগানেই জাতির বার্তা
রাজপথে ছাত্রদের স্লোগান—“দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা”। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ড. ইউনূস ছাড়া গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। আর তার পদত্যাগ মানেই অস্থিরতা ও ভারতীয় প্রভাবের পুনঃপ্রতিষ্ঠা।