আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দাখিলকৃত জুলাই-আগস্ট মাসের মামলার অভিযোগপত্রে প্রকাশ পেয়েছে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক নাটকের বিবরণ, যা ঘটেছে ২০২৫ সালের ৪ ও ৫ আগস্ট। অভিযোগ অনুযায়ী, ৪ আগস্ট রাতে ‘গ্যাং অফ ফোর’ (Gang of Four) নামে পরিচিত চারজন প্রভাবশালী নেতা—ওবায়দুল কাদের (Obaidul Quader), আনিসুল হক (Anisul Huq), সালমান এফ রহমান (Salman F Rahman) ও আসাদুজ্জামান খান কামাল (Asaduzzaman Khan Kamal)—শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)-কে কঠোর অবস্থান নিতে বাধ্য করেন।
গণভবনে রুদ্ধশ্বাস দুই দিন
৫ আগস্ট দুপুরে ছাত্রজনতার গণভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে ভারতে (India) পালিয়ে যান। তার আগে তিনি গণভবনে দুই দিন রুদ্ধশ্বাস সময় কাটান। অভিযোগে বলা হয়, তিনি ক্ষমতায় থাকার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালান এবং আন্দোলন দমনে নানা সিদ্ধান্ত নেন।
স্পিকারের পরামর্শ ও অভ্যন্তরীণ বিরোধ
৪ আগস্ট দুপুরে স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী (Shirin Sharmin Chaudhury) গণভবনে গিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পদত্যাগের পরামর্শ দেন। প্রথমে শেখ হাসিনা রাজি হলেও, ওবায়দুল কাদের ও মোহাম্মদ আলী আরাফাত (Mohammad Ali Arafat)-এর বিরোধিতায় তিনি সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন।
নিরাপত্তা সভা ও সামরিক প্রস্তুতি
৪ আগস্ট রাত ১০টায় গণভবনে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা (Sheikh Rehana), স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, তিন বাহিনীর প্রধান, আইজিপি আবদুল্লাহ আল মামুন (Abdullah Al Mamun), সেনাবাহিনীর কিউএমজি লেফটেন্যান্ট জেনারেল মুজিব এবং র্যাবের ডিজি। বৈঠকে আন্দোলন দমনের কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়।
পরে সেনাবাহিনীর অপারেশন কন্ট্রোল রুম (Army Operation Control Room)-এ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক বৈঠকে ঢাকার প্রবেশপথে কঠোর নিরাপত্তা ও সেনা-পুলিশ সমন্বয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত হয়।
শেখ হাসিনার নির্দেশ ও প্রতিক্রিয়া
বৈঠকে শেখ হাসিনা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “যা হবার হবে, আমি ক্ষমতা ছাড়ব না।” সেনাপ্রধানকে তিনি সরাসরি বিক্ষোভ দমনের নির্দেশ দেন। নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারেক সিদ্দিকী (Tarique Siddique) তাকে বলেন, “সেনাবাহিনী গুলি চালিয়ে কিছু লোক মেরে ফেললেই আন্দোলন থেমে যাবে।”
৫ আগস্ট সকালে শেখ হাসিনা তিন বাহিনীর প্রধানকে গণভবনে ডেকে এনে আবারো আন্দোলন দমনের কঠোর নির্দেশ দেন। তিনি পুলিশের প্রশংসা করলেও সেনাবাহিনীর ভূমিকার প্রতি অসন্তোষ জানান।
ক্ষমতা ছাড়ার আহ্বানে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
যখন সামরিক কর্মকর্তারা তাকে পদত্যাগের পরামর্শ দেন, শেখ হাসিনা ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, “তোমরা আমাকে গুলি করে মেরে ফেলো, গণভবনে কবর দিয়ে দাও।” অভিযোগে বলা হয়, পালানোর আগ পর্যন্ত তিনি প্রাণঘাতী সহিংসতা চালিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চেয়েছিলেন।
ট্রাইব্যুনালে দাখিলকৃত তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়, এই তথ্যাদি পৃথিবীর যেকোনো আদালতে বিচারযোগ্য এবং শেখ হাসিনাকে অভিযুক্ত করার মতো শক্ত প্রমাণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
সূত্র: YouTube Video