রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য গভীর রাষ্ট্রচিন্তা ও গণতান্ত্রিক বোধ জরুরি: নূরুল কবির

বিশিষ্ট সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক নূরুল কবির (Nurul Kabir) মন্তব্য করেছেন, শুধুমাত্র একটি ছোট এনজিও (NGO) চালিয়ে, ব্যাংকের কর্মকর্তা কিংবা সচিব হয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার জটিলতা বোঝা যায় না। সম্প্রতি একটি টেলিভিশন টকশোতে অংশ নিয়ে তিনি এসব মন্তব্য করেন।

রাষ্ট্রচিন্তা ছাড়া সংস্কার সম্ভব নয়

নূরুল কবির বলেন, “ছোট একটা এনজিও চালিয়ে, ছোট কোন একটা মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে কিংবা ব্যাংকের কর্মকর্তা হিসেবে রাষ্ট্র বোঝা যায় না।” তিনি মনে করেন, রাষ্ট্রচিন্তা, রাজনীতি, গণতন্ত্র ও সংস্কার নিয়ে গভীরভাবে না ভাবলে প্রকৃত গণতান্ত্রিক সংস্কার সম্ভব নয়।

বিএনপির সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন

তিনি বলেন, “যে বিএনপি (BNP) সংস্কারপন্থীদের এক সময় পার্টি থেকে বহিষ্কার করেছে, সমাজে যাদের ‘সংস্কারপন্থী’ বলে অপমান করা হয়েছে—তারাই এখন সংস্কারের কথা বলছে। এটা কি তাদের হঠাৎ গণতান্ত্রিক হয়ে যাওয়া? একদম না।”

সরকারের সংস্কার ও রাষ্ট্রদর্শনের ঘাটতি

বর্তমান সরকারকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “এই সরকার গণতান্ত্রিক সংস্কার কীভাবে হয়, তা বোঝে না। তাদের নিজস্ব কোনো সংস্কার দর্শন বা রাষ্ট্রদর্শন নেই। মন্ত্রীরা প্রচুর কথা বলেন, কিন্তু কেউ বলেন না—কী ধরনের সংস্কার হলে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। গত ১০ মাসে কোনো মন্ত্রীর মুখে এ ধরনের কথাই শোনা যায়নি।”

ছাত্রদের মাধ্যমে সরকার গঠনের মানসিকতা

নূরুল কবির বলেন, “তারা মনে করে ছাত্ররা তাদের ‘অ্যাপয়েন্ট’ করেছে, তাই তাদের মনোভাব এমন যেন তারাই ‘এপিস’। অথচ একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণের ম্যান্ডেটই আসল। আর যখন নির্বাচন থাকে না, তখন জনগণের সেই প্রতিনিধিত্ব করেন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন এবং সিভিল সোসাইটি।”

চাপ না এলে সংস্কারের আশা নেই

তিনি বলেন, “বর্তমান নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক সংস্কারের কোনো বাস্তব সম্ভাবনা নেই। তবে বড় আন্দোলন বা সমাজে চাপ তৈরি হলে কিছু সংস্কার সম্ভব।” উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “তিন সপ্তাহে হাজার মানুষকে হত্যা ও ২০ হাজার মানুষকে পঙ্গু করা হয়েছে কেবলমাত্র গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য। জনগণের এই চেতনা থাকলে, সরকার আগের মতো স্বৈরতান্ত্রিক আচরণ করতে পারবে না।”

সমাজের চাপে সংস্কারের দাবি

তিনি বলেন, সমাজের মধ্যে গণতান্ত্রিক সংস্কারের যে অনিবার্য চাপ তৈরি হয়েছে, তার ফলেই এখন বিভিন্ন দল সংস্কারের কথা বলছে। বিএনপি-র কথিত ৩১ দফা ও ২৭ দফা সংস্কার প্রস্তাবের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “একসময় সংস্কারপন্থীদের গালি দেওয়া যারা অভ্যাসে পরিণত করেছিল, আজ তারাই সংস্কারের কথা বলছে। এর মানে এই নয় যে তারা গণতান্ত্রিক হয়ে গেছে, বরং সমাজের চাপেই তারা এ কথা বলছে।”

শেষে তিনি বলেন, “এই সরকারের বড় সুযোগ ছিল। কিন্তু সেটি প্রায় নিঃশেষ। কারণ যারা সরকারে আছে, তারা গণতন্ত্র, রাষ্ট্র ও রাজনীতির উপাদানগুলো বোঝে না। রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য গভীর রাষ্ট্রচিন্তা ও গণতান্ত্রিক বোধ অপরিহার্য।”