বাংলাদেশ সেনাবাহিনী (Bangladesh Army) স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, দেশের সার্বভৌমত্ব বা জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে—এমন কোনো ইস্যুতে তারা সম্পৃক্ত হবে না। ‘মানবিক করিডর’ ইস্যুকে স্পর্শকাতর আখ্যায়িত করে সেনা সদর জানায়, সেনাবাহিনী এ বিষয়ে সম্পৃক্ত নয় এবং হবে না।
সরকারের সঙ্গে সহযোগিতার সম্পর্ক বজায় আছে
সোমবার ঢাকা সেনানিবাস (Dhaka Cantonment) অফিসার্স মেসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম-উদ-দৌলা ও কর্নেল মো. শফিকুল ইসলাম। সেখানে জানানো হয়, সরকার ও সেনাবাহিনী একে অপরের মুখোমুখি অবস্থানে নেই। বরং তারা দেশের কল্যাণে যৌথভাবে কাজ করছে।
করিডর ও সীমান্ত প্রসঙ্গে বক্তব্য
‘মানবিক করিডর’ বিষয়ে একাধিক প্রশ্নের জবাবে কর্নেল শফিকুল ইসলাম বলেন, সেনাবাহিনী এমন কোনো উদ্যোগে থাকবে না, যা দেশের নিরাপত্তা হুমকিতে ফেলতে পারে। ব্রিগেডিয়ার নাজিম-উদ-দৌলা বলেন, সীমান্ত পরিস্থিতি ও আরসা (ARSA)-র চলাচলের সঙ্গে করিডর ইস্যুর সম্পর্ক নেই। সরকার ও সেনাবাহিনীর মধ্যে বিভেদের কথা সঠিক নয়।
কেএনএফের ইউনিফর্ম ও অস্ত্র উদ্ধার
কেএনএফ (KNF) নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানানো হয়, সম্প্রতি চট্টগ্রামের একটি কারখানা থেকে ৩০ হাজার ইউনিফর্ম উদ্ধার হয়েছে। বম কমিউনিটির (জনসংখ্যা মাত্র ১২ হাজার) জন্য এত ইউনিফর্ম তৈরি হওয়া সন্দেহজনক। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।
গত ৪০ দিনে সেনাবাহিনী ২৪১টি অবৈধ অস্ত্র ও ৭০৯ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে। আগস্ট ২০২৪ থেকে মে ২০২৫ পর্যন্ত উদ্ধার হয়েছে ৯ হাজার ৬১১টি অস্ত্র এবং দুই লাখ ৮৫ হাজার ৭৬১ রাউন্ড গুলি।
ছায়াযুদ্ধ ও সীমান্ত পরিস্থিতি
ব্রিগেডিয়ার নাজিম বলেন, বাংলাদেশ কোনও ছায়াযুদ্ধে নেই, বরং সীমান্তে সেনাবাহিনী ও বিজিবি (BGB) সম্মিলিতভাবে দায়িত্ব পালন করছে। মিয়ানমার সীমান্তে আরাকান আর্মির আধিপত্য বেড়েছে, রাখাইনের ৮৫–৯০% এখন তাদের নিয়ন্ত্রণে। তবে বর্ডার কখনোই ‘কম্প্রোমাইজ’ করা হবে না—এটা ছিল তাঁর দৃঢ় বক্তব্য।
ভারতীয় সীমান্তে ‘পুশ ইন’ ও সেনা প্রস্তুতি
ভারত (India) থেকে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে লোক ঢুকিয়ে দেওয়া (পুশ ইন) সম্পর্কে তিনি বলেন, এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। বিজিবি পরিস্থিতি সামাল দিচ্ছে, তবে প্রয়োজনে সেনাবাহিনীও প্রস্তুত থাকবে।
নির্বাচন, অফিসার্স অ্যাড্রেস ও সেনা অবস্থান
নির্বাচন ও অফিসার্স অ্যাড্রেস প্রসঙ্গে কর্নেল শফিকুল বলেন, এটি সম্পূর্ণ অভ্যন্তরীণ বিষয়। সেনাবাহিনীর ক্ষমতা নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই। গণমাধ্যমে যেসব তথ্য এসেছে তা পুরোপুরি সঠিক নয়।
নিরাপত্তা ও ঈদ কার্যক্রম
সেনাবাহিনী জানায়, কোরবানির ঈদে চাঁদাবাজি, যানজট ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে সারা দেশে সেনা টহল ও চেকপোস্ট থাকবে। বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন ও লঞ্চঘাটে টিকিট কালোবাজারি ঠেকাতে সেনাবাহিনী তৎপর থাকবে।
মাদক ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সফলতা
গত এক মাসে সেনাবাহিনী ৪৮৭ জন মাদক ব্যবসায়ীসহ মোট ১,৯৬৯ জন অপরাধীকে গ্রেপ্তার করেছে। গত আগস্ট থেকে এই সংখ্যা ১৪,২৬৬ জন। উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ অবৈধ মাদক। ভেজাল শিশু খাদ্য, চিংড়ি ও অন্যান্য ভেজাল দ্রব্যের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন
জুলাই আন্দোলন (July Movement) চলাকালে আহতদের সুচিকিৎসায় সেনাবাহিনী ৪,৫৯৬ জনকে সিএমএইচে চিকিৎসা দিয়েছে, যার মধ্যে এখনো ৩৬ জন চিকিৎসাধীন।