সাম্প্রতিক সংকটে মধ্যস্থতার ভূমিকায় জামায়াত: ডা. তাহেরের সাক্ষাৎকারে গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত

জামায়াতে ইসলামীর (Jamaat-e-Islami) নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের (Dr. Syed Abdullah Mohammad Taher) দাবি করেছেন, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সংকট কাটিয়ে উঠতে জামায়াত গুরুত্বপূর্ণ মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করেছে। দৈনিক যুগান্তর (Jugantor)-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, অন্তর্বর্তী সরকার এবং সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধানের পথ খোঁজা হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ ভাবনায় তৎপরতা

জানা যায়, অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus) গত বৃহস্পতিবার হঠাৎ এক বৈঠকে উপদেষ্টাদের জানিয়ে দেন, তিনি পদত্যাগের কথা ভাবছেন। এ তথ্য জানান জাতীয় নাগরিক পার্টির (National Citizens’ Party (NCP)) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। এ ঘোষণার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে উদ্বেগ তৈরি হয় এবং সক্রিয় হয়ে ওঠে দেশি-বিদেশি মহল।

সংকট নিরসনে জামায়াতের গোপন তৎপরতা

এ অবস্থায় জামায়াত নেতৃবৃন্দ, বিশেষ করে দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান (Dr. Shafiqur Rahman), তাৎক্ষণিকভাবে বৈঠকে বসেন। তারা মনে করেন, ড. ইউনূস চলে গেলে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং নির্বাচন নিয়ে সঙ্কট আরও ঘনীভূত হবে।

ডা. তাহের জানান, তারা দ্রুত বিএনপি, এনসিপি, ইসলামিক দল, অন্তর্বর্তী সরকার এবং সেনাপ্রধানের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন। “আমরা উদ্বিগ্ন ছিলাম, কিন্তু ভীত হইনি,” বলেন তিনি। “আমরা বিশ্বাস করেছিলাম, একটি সুন্দর সমাধান সম্ভব। আমরা ভুল বোঝাবুঝি দূর করতে চেয়েছি।”

সংকটের মূল দুই কারণ: তারিখ ও আস্থার সংকট

ডা. তাহের বলেন, মূলত দুইটি কারণে সংকট তৈরি হয়েছিল—এক, নির্বাচনের নির্দিষ্ট তারিখ নিয়ে পক্ষগুলোর মধ্যে মতবিরোধ এবং দুই, পারস্পরিক আস্থার অভাব। কেউ কেউ মনে করেছিলেন, নির্বাচন পিছিয়ে যাবে কিংবা রাজনৈতিক কৌশলের শিকার হবে। আবার কেউ কেউ নির্বাচন ঠেকানোর গুজব ছড়াচ্ছিলেন।

তবে জামায়াত প্রধান উপদেষ্টাকে স্পষ্টভাবে জানায় যে নির্বাচন আয়োজন তার প্রধান দায়িত্ব এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার প্রক্রিয়া নির্ধারণে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ থাকা দরকার। তাহের বলেন, “এক মাস কমবেশি হলে মানুষ অসহিষ্ণু হবে না, কিন্তু স্বচ্ছতা জরুরি।”

সেনাবাহিনীর ভূমিকা ও ভাবনা

ডা. তাহের বলেন, দেশের সেনাবাহিনী (Army)ও এই পরিস্থিতি নিয়ে চিন্তিত ছিল। তাদের মধ্যেও সংশয় ছিল নির্বাচন আদৌ হবে কিনা, অথবা সরকারের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ কী। জামায়াত তাদের বলেছে, “নির্বাচনের ব্যাপারে আপনাদের স্পষ্টতা থাকা উচিত এবং সহযোগিতাও করা উচিত।”

তাহের মন্তব্য করেন, “চাপ দিয়ে নির্দিষ্ট তারিখে নির্বাচন বাধ্যতামূলক করার মানসিকতা রাজনীতিতে ইতিবাচক নয়। জামায়াত সবসময়ই সংলাপ ও সমঝোতায় বিশ্বাস করে।”

সমাপ্তি ও প্রত্যাশা

সবশেষে ডা. তাহের আশাবাদ ব্যক্ত করেন, সংকট কাটিয়ে সবার গ্রহণযোগ্যতা অর্জনকারী একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। “আশা করি, আর কোনো সমস্যা হবে না। এবং আমরা সবাই নির্বাচনমুখী হবো ইনশাআল্লাহ,” বলেন তিনি।