কেএনএফ-এর জন্য ২০ হাজার ইউনিফর্ম তৈরির পেছনে কী পরিকল্পনা?

চট্টগ্রাম (Chattogram) নগরীর একটি গার্মেন্টস কারখানা থেকে পার্বত্য সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ (KNF)-এর জন্য তৈরি ২০ হাজার ৩০০ পিস ইউনিফর্ম উদ্ধার হওয়ায় দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সংগঠনটির প্রকৃত সদস্যসংখ্যার তুলনায় অনেক বেশি ইউনিফর্ম তৈরির উদ্দেশ্য নিয়ে নানা প্রশ্ন ও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, কেএনএফ হয়তো বড় ধরনের সশস্ত্র কার্যক্রমের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

ইউনিফর্ম তৈরি ও উদ্ধার অভিযান

চট্টগ্রামের বাইজিদের নয়হাট এলাকার ‘রিংভো অ্যাপারেলস’ নামের একটি গার্মেন্টসে গত মার্চ মাস থেকে ইউনিফর্ম তৈরির কাজ চলছিল। ১৮ মে সেখানে অভিযান চালিয়ে পুলিশ ২০ হাজার ৩০০ পিস ইউনিফর্ম উদ্ধার করে। এ ঘটনায় কারখানার মালিক শাহিদুল ইসলামসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে পুলিশ আরও গ্রেপ্তার করে দুই ক্রেতা—গোলাম আজম ও নিয়াজ হায়দারকে।

পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন

অভিযানে বিপুল পরিমাণ সামরিক ধাঁচের পোশাক উদ্ধার হলেও পুলিশ প্রথমে বিষয়টি এক সপ্তাহ গোপন রাখে। যেখানে তুলনামূলক ছোট অপরাধের ক্ষেত্রেও গণমাধ্যমে প্রচার হয়, সেখানে এমন ঘটনা আড়াল রাখায় পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

পরিকল্পিত অপারেশনের ইঙ্গিত?

বিশ্লেষকদের মতে, কেএনএফ-এর সদস্য সংখ্যা সর্বোচ্চ হাজার খানেক হলেও এই ইউনিফর্মের সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি। সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম (Major (Retd.) Emdadul Islam) বলেন, “যদি মাথাপিছু দুটি ইউনিফর্ম ধরা হয়, তাহলে ১০-১৫ হাজার মানুষের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলেই প্রতীয়মান হয়।”

সেনাবাহিনীর উদ্বেগ

সেনাবাহিনীর (Bangladesh Army) পক্ষ থেকেও উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজিম উদ দৌলা (Nazim Ud Doula) বলেন, “বম কমিউনিটির মোট সদস্য সংখ্যা ১২ হাজার। তাদের মধ্যে শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই রয়েছে। তাই এই ইউনিফর্ম কেএনএফ-এর জন্য কিনা, তা তদন্তে দেখা হচ্ছে। আমরা বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।”

অর্থের যোগান ও পলাতক ব্যক্তি

তদন্তে জানা গেছে, এই বিশাল ইউনিফর্ম তৈরির কাজের পেছনে ছিল দুই কোটি টাকার একটি চুক্তি, যা করেন কুকিচিন সদস্য মহেলা সিন মারমা ওরফে মং। তবে তিনি এখনো পলাতক।

জাতির সামনে প্রশ্ন

চট্টগ্রাম থেকে কেএনএফ-এর জন্য বিপুল ইউনিফর্ম উদ্ধারের ঘটনাটি নিছক বিচ্ছিন্ন কিছু নয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। প্রশ্ন উঠছে—এত অর্থ কারা দিচ্ছে? এত ইউনিফর্ম কাদের জন্য? এসব প্রশ্নের উত্তর এখনও অজানা হলেও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছে।