খাদ্য অধিদপ্তরে ফের দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার (Ali Imam Majumder) এবং তার পুত্র মাহমুদুল ইমাম টিপুর বিরুদ্ধে। পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সাধন চন্দ্র মজুমদার (Sadhan Chandra Majumder) ও কামরুল ইসলাম (Kamrul Islam) এর বিরুদ্ধে যে ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল, ঠিক তেমনই অনিয়মের ধারাবাহিকতা দেখা যাচ্ছে বর্তমান সরকারের সময়ও।
সুপ্রিম কোর্টের রায় উপেক্ষা করে নিয়োগ
খাদ্য অধিদপ্তর (Food Directorate)-এর অধীন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক (ডিসি ফুড) পদের মতো ক্যাডার পদে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের নির্দেশ অনুযায়ী নন-ক্যাডার কর্মকর্তাকে দায়িত্ব প্রদান করা যাবে না। কিন্তু ওই নির্দেশনা উপেক্ষা করে ডিজি মো. আবুল হাছানাত হুমায়ুন কবীর (Md. Abul Hasanat Humayun Kabir) সম্প্রতি উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মো. আব্দুর রহমান খানকে চাঁদপুর (Chandpur) জেলার ডিসি ফুডের আয়ন-বায়নের দায়িত্ব দিয়েছেন।
এই আব্দুর রহমান খান পূর্বেও কক্সবাজার (Cox’s Bazar) সদরের একই পদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন, যার পেছনেও ছিল মন্ত্রী সাধনের ভূমিকা। এ ধরনের পদায়ন সুপ্রিম কোর্টের রায় লঙ্ঘনের শামিল বলে সমালোচনা চলছে খাদ্য অধিদপ্তরে।
উপদেষ্টার পুত্র টিপুর প্রভাব ও ঘুষ চ্যানেল
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারের পুত্র মাহমুদুল ইমাম টিপু দীর্ঘদিন ধরেই অধিদপ্তরের বদলি ও নিয়োগ সংক্রান্ত তদবির বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। বর্তমানে টিপুর নাম এত বেশি প্রচারিত হওয়ায় উপদেষ্টা নাকি ঘুষ আদায়ের বিকল্প চ্যানেলও চালু করেছেন।
জয়দেবপুরে বদলির দাবিতে তদবির
পুরাতন একটি ঘটনাতেও উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল। ২০২৪ সালের নভেম্বরে উপদেষ্টা পদে দায়িত্ব পাওয়ার পর কুমিল্লা চান্দিনার খাদ্য পরিদর্শক এনামুল হককে গাজীপুর (Gazipur) জেলার জয়দেবপুর (Joydebpur) এলএসডি অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার পদে বদলির তদবির করেন তিনি। সেই পদটি দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় এবং ঘুষের রেটও উচ্চ, প্রায় ৪০ লাখ টাকা বলে জানা যায়। খাদ্য সচিব তখন ইতোমধ্যে অন্য কর্মকর্তাকে সেখানে নিয়োগ দিয়েছেন, তবুও উপদেষ্টা চাপ প্রয়োগ করেন।
কর্তৃপক্ষের নীরবতা
সাপ্তাহিক শীর্ষকাগজের পক্ষ থেকে এসব বিষয়ে প্রশ্ন করা হলেও খাদ্য অধিদপ্তরের ডিজি হুমায়ুন কবীর ও খাদ্য সচিব মো. মাসুদুল হাসান (Md. Masudul Hasan) কেউই কোনো উত্তর দেননি। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, আওয়ামী আমলে যেভাবে সুবিধাভোগী কর্মকর্তারা রাজনৈতিক আদেশে কাজ করেছেন, তেমনি অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেও একই ধারা অব্যাহত রয়েছে।
ব্যতিক্রম ছিলেন আব্দুল খালেক
আগের ডিজি মো. আব্দুল খালেক (Md. Abdul Khalek) একজন সৎ ও সাহসী কর্মকর্তা হিসেবে অধিদপ্তরে পরিচিত ছিলেন। অথচ উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার তার কাছেও অবৈধ আবদার করেছিলেন, যা পরে অসঙ্গতিপূর্ণ কারণে প্রত্যাখ্যান করেন খালেক।
উল্লেখ্য, এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে এখনো কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ফলে প্রশ্ন উঠছে—আওয়ামী আমল শেষ হলেও, দুর্নীতির ধারা কি শেষ হবে না?