ভারতের হরিয়ানা (Haryana) রাজ্যের পঞ্চকুলা (Panchkula) শহরে একটি গাড়ি থেকে একই পরিবারের ছয় সদস্যের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গাড়ির বাইরে বসে থাকা প্রভীণ মিত্তল নামে এক ব্যক্তি মৃত্যুর আগে বলেন, “আর পাঁচ মিনিট, তারপরই মরে যাব।” পরে তাকেও মৃত ঘোষণা করা হয়। সোমবার (২৬ মে) রাতে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে।
আত্মহত্যার আগে প্রভীণের বার্তা
গোলাপি জামা ও খয়েরি প্যান্ট পরা প্রভীণ মিত্তল গাড়ির পাশে বসে ছিলেন। একজন স্থানীয় বাসিন্দা তার কৌতূহল থেকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আর পাঁচ মিনিট, তার পরই মরে যাব।” স্থানীয়রা সন্দেহ হওয়ায় গাড়ির দরজা খোলার অনুরোধ করলে প্রভীণ বাধা দেন। এরপর গাড়ির জানালায় তোয়ালে সরিয়ে দেখা যায় ভেতরে ছয়জনের মরদেহ। পরে পুলিশ ও অ্যাম্বুল্যান্স এসে মরদেহগুলো উদ্ধার করে এবং প্রভীণকেও হাসপাতালে নেওয়ার আগে মৃত ঘোষণা করা হয়।
মৃতদের পরিচয় ও পারিবারিক অবস্থা
মৃতদের মধ্যে ছিলেন প্রভীণ মিত্তল (৪২), তার স্ত্রী, তিন সন্তান (দুই মেয়ে ও এক ছেলে), এবং বৃদ্ধ মা-বাবা। পরিবারটি মূলত উত্তরাখণ্ডের (Uttarakhand) দেরাদুন (Dehradun) জেলার বাসিন্দা হলেও পঞ্চকুলায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। তারা মধ্যপ্রদেশের (Madhya Pradesh) বাগেশ্বর ধাম (Bageshwar Dham) থেকে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান শেষে ফিরছিলেন।
চিঠিতে আত্মহত্যার কারণ ও নির্দেশনা
গাড়ির ভেতর থেকে একটি চিঠিও উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাতে আত্মহত্যার কারণ হিসেবে চরম ঋণসঙ্কটের কথা উল্লেখ করেছেন প্রভীণ মিত্তল। চিঠিতে তিনি নিজেকেই দায়ী করেন এবং স্পষ্ট করে লিখেন, তার শ্বশুরবাড়িকে যেন এই ঘটনার জন্য দায়ী না করা হয়। এছাড়াও তিনি উল্লেখ করেন, মৃত্যুর পর তার মামাতো ভাই যেন শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন।
দেনার পরিমাণ ও ব্যবসায়িক ব্যর্থতা
প্রভীণের মামাতো ভাই সন্দীপ আগরওয়াল (Sandeep Agarwal) জানান, প্রভীণের ২০ কোটি রুপি ঋণ হয়ে গিয়েছিল। তিনি হরিয়ানার হিসার (Hisar) জেলার বারওয়ালা (Barwala)তে থাকতেন এবং হিমাচলে একটি লোহার ছাঁটের কারখানা খুলেছিলেন। সেই কারখানাটি ঋণ শোধ করতে না পারায় বাজেয়াপ্ত করে ব্যাঙ্ক। পরবর্তীতে তিনি দেরাদুনে যান এবং সেখান থেকে আবার পঞ্চকুলায় ফিরে এসে ট্রাভেল এজেন্সি শুরু করেন, যা শেষ পর্যন্ত টিকেনি। দেনার বোঝা বেড়ে যাওয়ায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেন তিনি ও তার পরিবার।
পুলিশি তদন্ত
ঘটনার পর প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যাই কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও, পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আত্মহত্যার পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।