ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্য—যেগুলোকে একত্রে ‘সেভেন সিস্টারস’ (Seven Sisters) বলা হয়—সম্পূর্ণভাবে ভূমিবেষ্টিত। সমুদ্রগামী রুট না থাকায় এই অঞ্চলগুলোর জন্য বাংলাদেশই ছিল সবচেয়ে কার্যকর সমুদ্রপথ। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ (Bangladesh)–ভারত (India) সম্পর্কের শীতলতায় বিকল্প পথ খুঁজতে গিয়ে বেকায়দায় পড়েছে ভারত।
ড. ইউনূসের মন্তব্যে কূটনৈতিক আলোড়ন
সাম্প্রতিক এক সফরে ড. মোহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus) চীনে বলেন, “ভারতের সেভেন সিস্টারস অঞ্চলের একমাত্র সমুদ্র অভিভাবক বাংলাদেশ।” এই বক্তব্য ভারতের নীতিনির্ধারকদের মধ্যে আলোচনার ঝড় তোলে।
সম্পর্কের অবনতি ও বিকল্প রুট
শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক স্পষ্টভাবে শীতল হয়ে পড়ে। একসময় ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক সম্পর্ক বর্তমানে অনেক স্থলবন্দরে কার্যত স্থবির। ভারতের বেশ কিছু আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।
এই পরিস্থিতিতে ভারত নির্ভরতা কমাতে বিকল্প সমুদ্রপথ খুঁজছে। বিশেষ করে ‘কালাদান মাল্টিমোডাল ট্রানজিট প্রজেক্ট’ (Kaladan Multimodal Transit Project) বর্তমানে ভারতের প্রধান ভরসা। এই প্রকল্প অনুযায়ী, কলকাতা বন্দর থেকে পণ্য যাবে মিয়ানমার (Myanmar)র সীতওয়ে বন্দরে (Sittwe Port) এবং সেখান থেকে নদীপথে পালেরতুয়া হয়ে মিজোরাম (Mizoram)তে প্রবেশ করবে।
রেলসংযোগ থমকে বাংলাদেশ অংশে
আগরতলা-কলকাতা রেলসংযোগ বাংলাদেশ অংশে অনেকটাই এগিয়ে গেলেও, বর্তমান সরকারের সময় তা কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। আগরতলায় আন্তর্জাতিক স্টেশন নির্মিত হলেও এখন পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু হয়নি।
মিয়ানমারের ঝুঁকিপূর্ণ নিরাপত্তা পরিবেশ
বিকল্প পথ খোঁজার প্রয়াস থাকলেও, ভারতের নীতিনির্ধারকরা স্বীকার করেছেন, মিয়ানমারের নিরাপত্তা পরিস্থিতি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। সামরিক জান্তা ও আরাকান আর্মির (Arakan Army) মতো বিদ্রোহী গোষ্ঠীর কারণে সেখানে ভারতীয় প্রকৌশলী ও শ্রমিকরা হামলার শিকার হচ্ছেন।
চীনের প্রভাব ও কৌশলগত উদ্বেগ
এছাড়া, মিয়ানমারে চীনের (China) প্রভাব বৃদ্ধিও ভারতের জন্য বড় কূটনৈতিক উদ্বেগের কারণ। চীনের সহায়তায় নির্মিত সীতওয়ে বন্দর এবং চীন-মিয়ানমার ইকোনমিক করিডর নিয়ে ভারতীয় কূটনৈতিক মহলে উদ্বেগ বিরাজ করছে।
বাংলাদেশকে পাশ কাটানো কি সম্ভব?
বিশ্লেষকদের মতে, বিকল্প রুট খোঁজার চেষ্টায় থাকলেও বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব কমছে না, বরং বেড়েই চলেছে। কারণ, বাংলাদেশের ভৌগোলিক অবস্থান ভারতের জন্য সবচেয়ে দ্রুততর, নিরাপদ ও খরচ-সাশ্রয়ী বাণিজ্যপথ হিসেবে অনন্য।