“৬ হাজার টাকার ওষুধ ৩৪ হাজার ৫০০ টাকায়!”—বাংলাদেশে ওষুধের বাজারে ভয়াবহ নৈরাজ্য

বাংলাদেশজুড়ে ওষুধের বাজারে চলছে লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধি, প্রতারণা, ভোক্তা ঠকানো আর নজরদারির ঘাটতি। কুমিল্লার বরুড়া উপজেলা (Barura Upazila)র জালগাঁও গ্রামে বাসিন্দা ফারজানা আক্তার বিথী (Farzana Akhter Bithi)র অভিজ্ঞতা তার ভয়াবহ প্রমাণ।

৬ হাজার টাকার ওষুধ বিক্রি করা হয় ৩৪,৫০০ টাকায়!

মাকে নিয়ে কুমিল্লামুন হাসপাতাল (Moon Hospital) যান বিথী। সেখানকার চিকিৎসক সুইজারল্যান্ডের তৈরি অ্যাকলাস্টা ইনজেকশন ব্যবহারের পরামর্শ দেন। তবে চিকিৎসকের সহকারী বিজয় সরকার ভুয়া লেবেল লাগানো দেশীয় একটি ওষুধ ৩৪ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করেন—যার প্রকৃত মূল্য মাত্র ছয় হাজার টাকা।

ঘটনা জানার পর অভিযুক্ত নিজেই বলেন, “আসলে আমার কিছু টাকার প্রয়োজন ছিল… আমি ভুল স্বীকার করছি।” তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলেও আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও প্রতারণা

ঢাকার মিরপুর এলাকার ফল বিক্রেতা আব্দুল মতিন জানান, “আগে এক হাজারে ওষুধ হতো, এখন দেড়-দুই হাজার টাকাও কম পড়ে না।”

বেশ কিছু ওষুধের দাম এক বছরে ১১০% পর্যন্ত বেড়েছে। উদাহরণ:
– ‘অ্যানাফ্লেক্স ম্যাক্স-৫০০’: ১০→২১ টাকা
– ‘মারভ্যান ১০০ মি.গ্রা’: ৪০০→৭০০ টাকা
– ‘ফ্যামোট্যাক’: ২৫→৪৫ টাকা

নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত দাম

ভোক্তারা অভিযোগ করেছেন, প্যাকেটের দাম ৬০০ টাকা হলেও মিলক্যাল ট্যাবলেট বিভিন্ন জায়গায় ৫৫০–৬২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সিফাত আহমেদ (Sifat Ahmed) জানান, ঢাকার বাইরে ওষুধের দাম আরও বেশি।

রাশেদুল ইসলাম (Rashedul Islam) বলেন, এক ওষুধ বিভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ অনিয়ন্ত্রিত।

একই রোগের ওষুধ, দাম একেক কোম্পানির একেক

বাজারে গ্যাস্ট্রিকের মতো সাধারণ রোগের ওষুধে বিস্তর দাম পার্থক্য:
– হেলথকেয়ারের ‘সার্জেল’: ৭ টাকা
– স্কয়ারের ‘সেকলো’: ৬ টাকা
– গণস্বাস্থ্যের ‘জি-ওমিপ্রাজল’: ৩.৫ টাকা
– পপুলারের ‘প্রোগাট মাপস’: ৮ টাকা

এস এম নাজের হোসাইন (SM Nazer Hossain), ক্যাব ভাইস-প্রেসিডেন্ট বলেন, “একই রোগের ওষুধে এমন দামের ফারাক অব্যাখ্যাযোগ্য।”

উৎপাদকদের যুক্তি ও সরকারি অবস্থান

বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতি (Bangladesh Association of Pharmaceutical Industries)র মহাসচিব ডা. জাকির হোসেন বলেন, কাঁচামালের দাম ও শ্রমিক বেতন বৃদ্ধির কারণে ওষুধের দাম বাড়ানো হয়েছে।

অন্যদিকে, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর (Directorate General of Drug Administration)র পরিচালক আসরাফ হোসেন দাবি করেন, ৫–৭% এর বেশি বাড়ানো হয়নি। তবে বাজারে দ্বিগুণ দাম নিয়ে তদন্তের আশ্বাস দেন।

নজরদারির অভাব ও শাস্তির ঘাটতি

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, “ওষুধের দামে অনিয়ম বন্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রয়োজন।”

কিন্তু বাস্তবে কঠোর শাস্তি না হওয়ায় দায়ী ব্যক্তিরা রেহাই পাচ্ছে। ভোক্তা অধিকার আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান থাকলেও তা বাস্তবায়নে দুর্বলতা রয়েছে।