শেখ হাসিনা পরিবারের ১.২১ লাখ কোটি টাকার দুর্নীতির তদন্ত চলছে সাত দেশে

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে দেশ-বিদেশে সাতটি দেশে তদন্ত চলছে। এর আওতায় অভিযোগ উঠেছে প্রায় ১ লাখ ২১ হাজার কোটি টাকার সম্পদ আত্মসাৎ ও পাচারের।

বহুজাতিক তদন্ত ও অভিযুক্ত সম্পদের খোঁজ

তদন্ত করছে বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (BFIU), দ্য স্টোলেন অ্যাসেট রিকভারি (STAR), ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্টি করাপশন কো-অর্ডিনেশন সেন্টার (IACCC), যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস (DOJ), এবং ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর অ্যাসেট রিকভারি (ICAR)। তাদের অনুসন্ধানে বাংলাদেশ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং ও কেইম্যান দ্বীপপুঞ্জ (Cayman Islands)-এ বিপুল সম্পদের সন্ধান মিলেছে।

প্রধান অভিযোগ ও মামলা

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে দেশ ছেড়ে যান শেখ হাসিনা। এরপর তার এবং পরিবারের বিরুদ্ধে ৫টি দুর্নীতির মামলা হয়। এর মধ্যে রয়েছে:
– পূর্বাচলে রাজউক প্লট দখল
সূচনা ফাউন্ডেশন (Suchona Foundation), সিআরআই (CRI), ও বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট (Bangabandhu Memorial Trust)-এর দুর্নীতি
– রূপপুর প্রকল্পে ৬০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ
– যুক্তরাষ্ট্রে ৩৭ হাজার কোটি টাকা পাচার
– ৮টি প্রকল্প থেকে ২২ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ

জব্দকৃত সম্পদ

আদালতের আদেশে দেশের ভেতরে ইতোমধ্যে ৮৮৭ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদ ও ১,০৪৫ কোটি টাকার অস্থাবর সম্পত্তি জব্দ করা হয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে:
– পূর্বাচলে ৬০ কাঠা জমি (দলিলমূল্যে ১.৮ কোটি টাকা, বাজারমূল্যে ১২০ কোটি)
– গুলশান ও সেগুনবাগিচায় ৯টি ফ্ল্যাট ও ১টি বাড়ি
– খুলনার দিঘলিয়ায় ২.০৪ একর জমি
– ১৫৬টি ব্যাংক হিসাব জব্দ (মোট স্থিতি: ১,০৪৫ কোটি টাকা)

সূচনা ফাউন্ডেশন ও ব্যাংক লেনদেন

সায়মা ওয়াজেদ পুতুল (Saima Wazed Putul)-এর সূচনা ফাউন্ডেশনে জমা ৫৩২ কোটি টাকার মধ্যে ৪৬৫ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। ব্যাংকগুলোর CSR তহবিল থেকে ৩৩ কোটি টাকা এই ফাউন্ডেশনে দেওয়া হয়।
এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার (Nazrul Islam Majumdar) এর প্রভাবে এসব লেনদেন হয় বলে দাবি।

সিআরআই ও বঙ্গবন্ধু ট্রাস্ট

সিআরআই’র ৩৫.২১ কোটি টাকার এফডিআর রয়েছে। সংস্থাটির ট্রাস্টি বোর্ডে রয়েছেন সজীব ওয়াজেদ জয় (Sajeeb Wazed Joy) (চেয়ারম্যান), পুতুল (ভাইস চেয়ারম্যান) ও রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি (Radwan Mujib Siddiq Bobby)।
বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের ব্যাংক হিসাবে ১৬ কোটি ১২ লাখ টাকা আছে, যার লেনদেনও তদন্তাধীন।

যুক্তরাজ্যে শেখ রেহানার সম্পত্তি

ডেইলি মেইল (Daily Mail)–এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, শেখ রেহানা (Sheikh Rehana)–র লন্ডনের বাড়ি যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল ক্রাইম এজেন্সি (UK NCA) ফ্রিজ করেছে। বাড়িটির বাজারমূল্য ২০ কোটি ২৮ লাখ টাকা এবং এটি ১৪ বছর ধরে টিউলিপ সিদ্দিক (Tulip Siddiq)-এর পরিবার ব্যবহার করে আসছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎপরতা

বাংলাদেশ ব্যাংক (Bangladesh Bank) এর গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর (Dr. Ahsan H. Mansur) সম্প্রতি লন্ডনে গিয়ে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেন এবং পাচার করা সম্পদের তালিকা হস্তান্তর করেন। আগামীতে সিঙ্গাপুর সফরের পরিকল্পনাও রয়েছে তার।