বিএনপির নিলুফার চৌধুরী মনি (Nilufar Chowdhury Moni), যিনি দলের স্বনির্ভর বিষয়ক সহ-সম্পাদক এবং সাবেক এমপি, তিনি সম্প্রতি এক বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে বিভিন্ন সমসাময়িক রাজনৈতিক ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। আলোচনায় তিনি বলেন, “কেউ আন্দোলন করেছে বলে তাকে কি রাষ্ট্র দিয়ে দেবেন?”
টকশোতে রাজনৈতিক আলোচনা
টকশোতে উপস্থাপক দ্রুত নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “দ্রুত ভোট আপনারা চান। সারজিস আলম বলছেন, দ্রুত ভোট দিলে সেটা কলঙ্কিত হতে পারে।” এ প্রেক্ষিতে নিলুফার মনি বলেন, “নিবন্ধনবিহীন দলের কথা বাদ দিন। নিবন্ধিত দলগুলোর কথা শোনা উচিত। রাষ্ট্রের উচিত তাদের গুরুত্ব দেওয়া।”
তিনি সমালোচনা করে বলেন, “আপনারা সাতদিন এপয়েন্টমেন্ট না পেয়ে যেদিন পেলেন, সেদিনই প্রধান উপদেষ্টা আরেক দলের সঙ্গে বৈঠক করলেন। এটা কি রাষ্ট্রের বিবেকসম্মত আচরণ?”
রাষ্ট্র পরিচালনায় পক্ষপাতের অভিযোগ
নিলুফার অভিযোগ করেন, “রাষ্ট্রের কর্ণধার যেহেতু রাজা, তাই রাজা তার দলের মূল্যায়নই রাষ্ট্রকে দিয়ে করান।”
তিনি প্রশ্ন তোলেন, “কেন এনসিপির মতো অনিবন্ধিত দল (NCP)কে ডাকা হচ্ছে? তাদের কোনো গঠনতন্ত্র নেই। তাদের গণঅভ্যানে অংশগ্রহণ ছিল না। তাহলে এদের গুরুত্ব দেওয়ার কারণ কী?”
জামায়াত ও মুক্তিযুদ্ধের প্রসঙ্গ
তিনি বলেন, “বিএনপি (BNP) প্রথম দিনেই জামায়াতকে (Jamaat) ডেকেছিল, যদিও তাদের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। তবে জামায়াত একটি পুরোনো দল, এ কারণে তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।”
এছাড়াও তিনি বলেন, “মুক্তিযোদ্ধা, ৯০-র আন্দোলনকারী, ভাষা আন্দোলনকারীরা রাষ্ট্র পেয়েছেন। কিন্তু শুধুমাত্র আন্দোলন করার জন্য রাষ্ট্রের দায়িত্ব কাঁধে তুলে দেওয়া উচিত নয়।”
কোটা সংস্কার ও শিক্ষাব্যবস্থার দুরবস্থা
কোটা ইস্যুতে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “কোটা বিরোধী আন্দোলনের পরে আহত ও শহীদদের পরিবারের পুনর্বাসন দরকার—এটা ঠিক। কিন্তু কোটার মাধ্যমে নয়, তা আন্দোলনের আত্মাকে আঘাত করে।”
বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে সমালোচনা করে নিলুফার বলেন, “ছাত্ররা পড়াশোনায় মনোযোগী হতে চায়, কিন্তু বর্তমানে পাস-ফেইল সহজীকরণ সংস্কৃতি চালু করা হয়েছে।”
দলীয় ইতিহাস ও রাজনৈতিক সতর্কতা
ড. ইউনূসের রাজনৈতিক দলের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আপনারা ‘রাজার দল’ বলছেন, অথচ ড. ইউনূস এনসিপির কোনো পদে নেই। নিজের দলের ইতিহাস ও ঐতিহ্য নিয়ে কথা বলার সময় সতর্কতা প্রয়োজন।”
তিনি মনে করিয়ে দেন, “মেজর জিয়া (Major Zia) একই সময়ে প্রেসিডেন্ট ও দলের প্রধান ছিলেন, এটা কোনো বিশ্বাসঘাতকতা নয়।”
শেষে নিলুফার মনি বলেন, “নিজেদের ইতিহাস ভুলে গেলে দলের প্রতিও বিশ্বাসঘাতকতা হয়।”