বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (Bangladesh Federal Union of Journalists) (বিএফইউজে) মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী (Kader Gani Chowdhury) বলেছেন, “একটি ছবি লাখ শব্দের সমান, যা বলে দিতে পারে হাজারো কথা।”
বুধবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন (Bangladesh Photojournalist Association) আয়োজিত ‘রূপসি বাংলা জাতীয় আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও প্রতিযোগিতা’ অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন।
একটি ছবির শক্তি ও প্রভাব
কাদের গনি বলেন, “আলোকচিত্র সময়ের দর্পণ ও ইতিহাসের জীবন্ত সাক্ষী। ফটোগ্রাফি এমন এক শক্তিশালী উদ্ভাবন যা বিশ্বকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে দিয়েছে।”
তিনি উল্লেখ করেন, ২০১৫ সালের ২ সেপ্টেম্বর তুরস্ক উপকূলে নিথর পড়ে থাকা তিন বছরের শিশু আয়লান কুর্দির ছবি বিশ্ব বিবেককে নাড়িয়ে দিয়েছিল। যুদ্ধ, অমানবিকতা ও শরণার্থী সংকটের মুখরূপ হয়ে উঠেছিল আয়লানের সেই ছবি।
১৯৯৩ সালে দক্ষিণ সুদানে কেভিন কার্টারের তোলা একটি ছবি—যেখানে একটি ক্ষুধার্ত শিশু হামাগুঁড়ি দিয়ে খাদ্য সহায়তা কেন্দ্রের দিকে এগোচ্ছে আর পেছনে এক শকুন অপেক্ষায়—জগদ্বিখ্যাত হয়ে ওঠে। ছবিটি পরবর্তীতে পুলিৎজার পুরস্কার পায়, যদিও এ নিয়ে বিতর্কও ছিল।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে আলোকচিত্র
৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের সময় রংপুরের বাসন্তী ও দুর্গার ছবির কথা উল্লেখ করে কাদের গনি বলেন, “এই ছবিগুলো মানুষের বিবেককে জাগিয়ে তুলেছিল। এমনকি, সীমান্তে ফেলানির ঝুলন্ত লাশের ছবি ভারতীয় আগ্রাসনের চিত্র বিশ্বদরবারে তুলে ধরেছিল।”
তিনি বলেন, “ছবি শুধু শিল্প নয়, এটি সমাজের প্রতিবাদ, প্রতিরোধ ও মানবিকতার ভাষাও বটে।”
ফটোসাংবাদিকদের অবদান
কাদের গনি বলেন, “সংবাদপত্র ভাষার মাধ্যমে তথ্য দেয়, কিন্তু ছবি সেই তথ্যকে জীবন্ত করে তোলে।”
তিনি উল্লেখ করেন, ৫২’র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৭১’র মুক্তিযুদ্ধ ও ৯০’র স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন পর্যন্ত, ক্যামেরা এসব সংগ্রামের দলিল হয়ে উঠেছে। রফিক উদ্দীনের মৃত্যুর ছবি তুলে আমানুল হক ইতিহাসের সাক্ষ্য রেখে গেছেন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের ফটোসাংবাদিকরা বিশ্বব্যাপী নানা পুরস্কার অর্জন করেছেন। মোহাম্মদ পনির হোসেন (Mohammad Ponir Hossain) ২০১৮ সালে পুলিৎজার জিতেছেন, এছাড়া বাংলাদেশের আরও ১০ জন আলোকচিত্রী ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো পুরস্কার পেয়েছেন।
আন্তর্জাতিক সাফল্য ও সম্মাননা
আবীর আবদুল্লাহ, মুনেম ওয়াসিফ ও তানজিম ওয়াহাবের মতো বাংলাদেশি আলোকচিত্রীরা ওয়ার্ল্ড প্রেস ফটো ফাউন্ডেশনের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
একুশে পদকপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন— মো. কামরুজ্জামান, আফতাব আহমেদ, মনজুর আলম বেগ, মোহাম্মদ আলম, আমানুল হক, গোলাম মুস্তফা, সাইদা খানম ও পাভেল রহমান। শিল্পকলা পদক পেয়েছেন— গোলাম মুস্তফা, নাসির আলী মামুন, এমএ তাহের ও শফিকুল ইসলাম স্বপন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্য বক্তারা
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি একেএম মহসিন। প্রধান অতিথি ছিলেন সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ (Sharmin S Murshid)। আলোচনায় অংশ নেন জাতীয় প্রেস ক্লাব সভাপতি ও কালের কণ্ঠের সম্পাদক কবি হাসান হাফিজ (Hasan Hafiz), লেখক ও গবেষক ওবেইদ জায়গীরদার, ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বাবুল তালুকদার ও নাসিম শিকদার।