স্বাধীনতা রক্ষায় দ্রুত রোডম্যাপ ঘোষণা ও দায়িত্বশীলতার আহ্বান মাহমুদুর রহমানের

প্রবীণ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাহমুদুর রহমান (Mahmudur Rahman) এক বিশ্লেষণধর্মী লেখায় দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় সব পক্ষকে দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

বুধবার (২৮ মে) দৈনিক আমার দেশে প্রকাশিত ‘স্বাধীনতা রক্ষায় সব পক্ষ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিন’ শীর্ষক নিবন্ধে তিনি বলেন, “দিল্লির কূটচালকে পরাজিত করে সাম্প্রতিক প্রতিবিপ্লবী তৎপরতা ব্যর্থ করা সম্ভব হয়েছে। তবে বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে আমরা রাজনৈতিক ঐক্য ও দায়িত্বশীলতা হারিয়ে ফেলেছি।”

ড. ইউনূস সরকারের সমালোচনা

ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus) সরকারের নানা দিক তুলে ধরে মাহমুদুর রহমান বলেন, “৫ আগস্টের পর সংবিধান স্থগিত করে বিপ্লবী সরকার গঠন না করাই বড় ভুল হয়েছে। তরুণ উপদেষ্টাদের অগ্রহণযোগ্য পোস্ট ও দৃষ্টিকটূ আচরণে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। এ ছাড়া উপদেষ্টাদের ব্যক্তিগত সহকারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, করিডোর ইস্যুতে দ্বৈত বক্তব্য সরকারকে দুর্বল করেছে।”

সেনাবাহিনীর ভূমিকা ও বক্তব্য প্রসঙ্গ

সাম্প্রতিক সেনাপ্রধানের বক্তব্য নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। বলেন, “১৫ বছর ফ্যাসিস্ট শাসক শেখ হাসিনার (Sheikh Hasina) আমলে সেনাবাহিনী অভিভাবক পেয়েছে, এখন কেন ‘অভিভাবকহীনতা’ অনুভব করছে—এই দ্বৈত মানদণ্ড জাতিকে বিভ্রান্ত করে।”

বিএনপির অবস্থান ও সমালোচনা

বিএনপির (BNP) সমালোচনা করে মাহমুদুর রহমান বলেন, “নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও দলটি অযথা তড়িঘড়ি করে আন্দোলনে নেমে রাজনৈতিক ক্ষতি করছে। ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়রের চেয়ার দখলে নিয়ে প্রকৃতপক্ষে শেখ হাসিনার জাল নির্বাচনকেই বৈধতা দেওয়া হচ্ছে।”

তিনি বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল নেতার হত্যাকে কেন্দ্র করে উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগ দাবি করার পেছনে যথেষ্ট যুক্তি নেই। দলীয় নেতাদের চাঁদাবাজির অভিযোগ, মৌলবাদ প্রশ্নে বিভ্রান্তিকর অবস্থান, ভারতপন্থার অভিযোগ—সব মিলিয়ে বিএনপির জনভিত্তি ঝুঁকির মুখে পড়ছে।”

জাতীয় ঐক্যের প্রস্তাবনা

তিনি আহ্বান জানান, “সরকার, বিএনপি ও সেনাবাহিনীকে দ্রুত বিভেদ মিটিয়ে দেশরক্ষা ও নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে হবে। নয়তো জনগণ কাউকে ক্ষমা করবে না।”

তিনি আরও বলেন, “সরকারের এখন তিনটি প্রধান দায়িত্ব—ফ্যাসিস্টদের বিচার, ভবিষ্যতে এমন শাসন রোধে সংস্কার, এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা। তা না হলে রাষ্ট্রক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার সাহস দেখাতে হবে।”

ঐতিহাসিক প্রসঙ্গ ও ভবিষ্যতের ইঙ্গিত

তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট, ৩ নভেম্বর ও ৭ নভেম্বরের উদাহরণ টেনে বলেন, “আবারও একটি ‘জুলাই বিপ্লব’ হতে পারে যদি ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দল পরিস্থিতি বুঝে সঠিক সিদ্ধান্ত না নেয়।”