সকল খতিয়ান বাতিল নয়, মালিকানা নির্ধারণে বিডিএস ও স্মার্ট খতিয়ান হবে মূল ভিত্তি

সম্প্রতি “সকল প্রকার রেকর্ড খতিয়ান বাতিল” নিয়ে জনমনে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, তা বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। বাংলাদেশ সরকার এখন পর্যন্ত কোনো আইনে পূর্ববর্তী খতিয়ানগুলো বাতিল ঘোষণা করেনি। বরং প্রতিটি খতিয়ান ধারাবাহিকভাবে জমির মালিকানা নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসেবে গণ্য হচ্ছে।

খতিয়ানের ইতিহাস ও প্রাসঙ্গিকতা

সিএস (ক্যাডাস্ট্রাল সার্ভে) খতিয়ান চালু হয় ব্রিটিশ আমলে (১৮৮৮-১৯৪০), পরে এসএ (স্টেট অ্যাকুইজিশন), স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে আরএস (রিভিশনাল সার্ভে), বিএস (বাংলাদেশ সার্ভে) এবং সর্বশেষ বিডিএস (বাংলাদেশ ডিজিটাল সার্ভে) প্রবর্তিত হয়।

এসব খতিয়ানের মাধ্যমে জমির মালিকানা হস্তান্তরের রেকর্ড ও দখলের ধারাবাহিকতা থাকলে তা বর্তমান মালিকানার স্বীকৃত দলিল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

কবে খতিয়ান কার্যত ‘অকার্যকর’ হয়?

যদি পূর্বপুরুষের নামে থাকা সিএস বা এসএ খতিয়ানের জমি দলিলের মাধ্যমে বিক্রি করে দেওয়া হয়ে থাকে, এবং নতুন মালিক নামজারি ও দখলে থাকে, তাহলে পুরনো খতিয়ান ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিকতা হারায়। তবে একে “বাতিল” না বলে, “প্রাসঙ্গিকতা হারানো” বলা হয়।

বিডিএস স্মার্ট খতিয়ান: আধুনিক পদ্ধতির সূচনা

বর্তমানে বাংলাদেশে বিডিএস (BDS) নামক ডিজিটাল জরিপ পদ্ধতির আওতায় স্মার্ট খতিয়ান চালু হচ্ছে। এতে এক জমিতে একজন মালিকের নাম থাকবে এবং স্মার্ট কার্ডে ডিজিটালভাবে জমির মালিকানা সংরক্ষিত থাকবে। জমি বিক্রির সময় ‘বিয়োগ’ ও ক্রয়ের সময় ‘যোগ’ অপারেশন স্বয়ংক্রিয়ভাবে হবে।

বিডিএস জরিপ অনুযায়ী, আগামী ১০০ বছরে আর নতুন খতিয়ান হবে না। তবে এটি পুরনো খতিয়ানকে অকার্যকর করে না, বরং সেই ধারাবাহিকতাকে সম্মান করেই কার্যকর হবে।

কিছু ব্যতিক্রম: পার্বত্য এলাকা ও সিলেট

পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং সিলেট অঞ্চলে সিএস খতিয়ান হয়নি। সেখানে এসএ খতিয়ানই প্রাথমিক দলিল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

উপসংহার

সরকার এখন পর্যন্ত সকল খতিয়ান বাতিলের কোনো ঘোষণা দেয়নি। সিএস, এসএ, আরএস, বিএস ও বিডিএস—সবই বৈধ খতিয়ান এবং প্রাসঙ্গিক দলিল হিসেবে কার্যকর। তাই কোনো খতিয়ানধারী নাগরিকের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই, যদি তাদের কাছে বৈধ দলিল ও নামজারি থেকে থাকে।