বাংলাদেশি তরুণীকে বিয়ে করেও স্বপ্ন পূরণ হলো না চীনা যুবকের, রহস্যজনক মৃত্যু ঢাকায়

বাংলাদেশি তরুণীকে বিয়ে করে সুখের সংসারের স্বপ্ন দেখেছিলেন চীনা (Chinese) যুবক হান কিংগু। কিন্তু মোংলার বাগেরহাটে শুরু হওয়া ভালোবাসার গল্প শেষ হয় ঢাকায় এক অজানা মৃত্যুর মাধ্যমে। স্ত্রীকে নিয়ে স্বদেশে ফেরার আগেই ঢাকার সোনারগাঁয় গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার হয় তার মরদেহ। পরিবার, স্ত্রী ও পুলিশ—সবার সামনে এখন এক জটিল প্রশ্ন: এটি দুর্ঘটনা, না পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড?

চীনা যুবক ও বাংলাদেশি তরুণীর পরিচয়

হান কিংগু (৩২) চীনের হেনান প্রদেশের ঝংমু কাউন্টির জিয়াগুহান গ্রামের বাসিন্দা। বাংলাদেশে আসেন এক মাসের ভিসায়, উদ্দেশ্য ছিল ভ্রমণ। ঢাকা বিমানবন্দরে তার সঙ্গে দেখা হয় মোংলার দালাল জোহন হালদার-এর। তার মাধ্যমে পরিচয় হয় মোংলার কলেজ রোড এলাকার বাসিন্দা কাজল আক্তার-এর সঙ্গে, এবং ১৭ এপ্রিল ঢাকায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে তারা বিয়ে করেন।

অর্থ চাহিদা, দালালি ও জটিলতা

বিয়ের দুই সপ্তাহ না যেতেই কাজলের পরিবারের কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করা হয়। একই দাবির কথা জানান হান কিংগু, বলেন—দালাল জোহন ইতোমধ্যে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন। অর্থ লেনদেন নিয়ে হান ও কাজলের পরিবারের মধ্যে টানাপোড়েন শুরু হয়।

ঢাকায় নাটকীয়তা ও মৃত্যু

৬ মে হান কিংগু ভিসা নবায়নের জন্য জোহনকে নিয়ে ঢাকা-য় যান। সেখান থেকে ফেরার কথা থাকলেও রাতে তাকে রাখা হয় দালালের আত্মীয় সুনিতা হালদারের বাসায়। পরদিন ভোরে সোনারগাঁ থানা পুলিশ তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ, এবং শেষে গুলশান ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় হান কিংগুর।

চীনা পরিবার ও রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ

চীনা দূতাবাস ও পরিবারের সদস্যরা হাসপাতালে ছুটে আসেন। শেষ পর্যন্ত তাকে দাফন করা হয় উত্তরায়, চীনা দূতাবাসের সহায়তায়।

সন্দেহ ও আইনি প্রক্রিয়া

কাজল আক্তার অভিযোগ করেন, তার স্বামীকে হত্যা করেছে সুনিতা হালদার ও তার চক্র। ১৯ মে সোনারগাঁ থানায় অজ্ঞাত আসামির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন তিনি।

জোহন হালদার অবশ্য দাবি করেন, তিনি কোনো ষড়যন্ত্রে জড়িত নন। তিনি শুধু ভিসা প্রক্রিয়ায় সহায়তা করেছেন। পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, একটি নিয়মিত মামলা হয়েছে, তদন্ত চলছে।

আন্তর্জাতিক বিয়ে ও পাচার চক্রের অভিযোগ

জানা গেছে, দালাল জোহনের পরিবারের আরও দু’টি বিয়ে চীনা নাগরিকদের সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছে। মোংলা উপজেলায় ১৫-২০ জন চীনা নাগরিক এই ধরনের চুক্তিভিত্তিক বিয়ের মাধ্যমে অবস্থান করছেন। অভিযোগ রয়েছে, এসব বিয়ের মাধ্যমে চীনে তরুণী পাচার করে লাখ লাখ টাকা আয় করছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র।