বাবাকে নিয়ে তারেক রহমানের স্মৃতিচারণ: “৩০ মে এলেই নিজেকে এতিম মনে হয়”

৩০ মে উপলক্ষে তার পিতা জিয়াউর রহমান (Ziaur Rahman)কে স্মরণ করে হৃদয়বিদারক স্মৃতিচারণ করেছেন তারেক রহমান (Tarique Rahman)। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও শৈশবের নানা ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, “এই দিনে নিজেকে আবারও এতিম মনে হয়।”

বাবাকে হারানোর বেদনা

তারেক রহমান লেখেন, “১৯৮১ সালের ৩০ মে আমাদের পরিবারের জন্য সবচেয়ে বেদনাদায়ক দিন। এই দিনে আমরা দুই ভাই এতিম হয়েছিলাম।” গভীর ভালোবাসা ও শূন্যতা প্রকাশ করে তিনি জানান, বাবাকে হারিয়ে প্রতিবার ৩০ মে এলেই স্মৃতি বয়ে আনে দুঃখ আর কান্না।

জনমানুষের ভালোবাসা

তিনি স্মরণ করেন, কীভাবে লাখো মানুষ জিয়াউর রহমানের জানাজায় অংশ নিয়েছিল। “একটি মানুষ কেমন করে এত মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে পারেন, তা ৩০ মে দেখেছি,”— বলেন তারেক। তিনি উল্লেখ করেন বৃদ্ধ জরিনা বেগম, ৮০ বছরের আ. রশিদসহ অসংখ্য সাধারণ মানুষের ভালোবাসা ও কান্নার কথা।

পিতার অনুপস্থিতিতে শিখে ওঠা

শৈশবে পিতার কাছ থেকে সরাসরি শেখার সুযোগ না পেলেও জিয়াউর রহমানের জীবন ও আচরণ থেকেই শিক্ষা নিয়েছেন বলে জানান তারেক। তিনি তুলে ধরেন কিছু ঘটনা, যা তার জীবনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে।

  • অপচয় বিরোধী শিক্ষা: বড় গাড়িতে তেল বেশি খরচ হয় বলে স্কুলে ছোট গাড়িতে পাঠানোর নির্দেশ দেন জিয়া।
  • নৈতিকতা শেখানো: সেনা গার্ডকে গালি দেওয়ায় রাতে ঘুম থেকে তুলে ক্ষমা চাওয়ান পিতা।
  • বিলাসিতা ও নাম ব্যবহার নিষিদ্ধ: টিভিতে গান গাওয়ার পর পিএস-এর মাধ্যমে নিষেধাজ্ঞা, সাধারণ সিটে বসে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ।
  • সহজ-সরল জীবনযাপন: পুরনো জামা-কাপড় পরে অভ্যস্ত হতে শেখান বাবা।
  • রাষ্ট্রীয় সফরে না যাওয়ার শিক্ষা: রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে পরিবারের সদস্য হিসেবে না থাকার শিক্ষা দেন, রাজার ছেলের সঙ্গে নিজের তুলনার জবাব দেন যুক্তিতে।
  • নামাজ ও ধর্মীয় দায়িত্ব: সৈনিকদের ফজরের নামাজে জাগিয়ে তুলতেন, নিজেকে তাদের বড় ভাই মনে করে দায়িত্ব পালন করতেন।
  • আত্মীয়-স্বজনের দূরত্ব: প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর আত্মীয়দের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখতে বাধ্য হন রাষ্ট্রীয় ভাবমূর্তি রক্ষার স্বার্থে।

শেষ অনুভব

তারেক রহমান বলেন, “আজো মনে হয় বাবা আমাদের মধ্যেই আছেন— কখনো অফিসে, কখনো গ্রামের পথে।” এই বিশ্বাস তাকে প্রেরণা দেয়, শান্তনা দেয়। তিনি লেখেন, “আমরা হয়তো ছোট ছিলাম, তাই আব্বুর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছি, কিন্তু তার রেখে যাওয়া আদর্শ ও শিক্ষা আজো আমাদের জীবনের পথপ্রদর্শক।”

শিক্ষনীয় দিক

এই স্মৃতিচারণে তারেক রহমান শিক্ষা হিসেবে তুলে ধরেন—

  • অপচয়ের বিরুদ্ধাচরণ
  • নৈতিক শুদ্ধতা
  • সামাজিক সচেতনতা
  • দায়িত্ববোধ ও আদর্শচর্চা

সবশেষে তিনি বলেন, “আমাদের বাবা ছিলেন কোটি কোটি মানুষের নয়নমনি, আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার এবং বিশ্বের একজন সম্মানিত নেতা।”