সরকার এখনো বুঝতে পারছে না কোথা থেকে শুরু বা শেষ করবে: সারোয়ার তুষার

জাতীয় নাগরিক পার্টি (Jatiya Nagorik Party)র যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার (Sarwar Tushar) সম্প্রতি এক টেলিভিশন টকশোতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, বর্তমান সরকার এখনো বুঝে উঠতে পারছে না—কোথা থেকে শুরু করবে এবং কোথায় শেষ করবে।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট নিয়ে বক্তব্য

সারোয়ার তুষার বলেন, ১৯৪৭ সালের ভারত বিভাগের ঘটনা এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ—এই দুটি ঘটনাই বাংলাদেশের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ‘নন-নেগোশিয়েবল’, অর্থাৎ কোনোভাবেই অস্বীকারযোগ্য নয়, তবে ১৯৪৭ সালের ঘটনাকেও ইতিহাসের ধারাবাহিকতা হিসেবে মেনে নিতে হবে।

তিনি বলেন, “শেখ মুজিবুর রহমান (Sheikh Mujibur Rahman) ও তাজউদ্দীন আহমদ (Tajuddin Ahmad) সহ অনেক নেতাই পাকিস্তান আন্দোলনের অংশ ছিলেন, কিন্তু কেউই বলেননি যে আন্দোলনটি ভুল ছিল।” তাঁর মতে, ১৯৪৭ সালে আলাদা রাষ্ট্র না হলে বাংলাদেশ আজ কাশ্মীরের মতো সংকটে পড়তে পারত।

আইন-শৃঙ্খলা ও পুলিশ সংস্কারের দাবি

তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি মাঝে মাঝে ‘অস্বাভাবিকভাবে খারাপ’ হয়ে যায়, যা খুবই রহস্যজনক। এটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অক্ষমতা নয়, বরং ইচ্ছাশক্তির অভাব বলে তিনি মনে করেন।

পুলিশ ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা তুলে ধরে তিনি বলেন, এখন সময় এসেছে স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠনের। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (Ministry of Home Affairs) এই উদ্যোগকে বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে না, যার ফলে ভেতর থেকেই বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।

প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রসঙ্গ ও আজিজ ভাইয়ের মন্তব্য

আলোচনায় অংশ নিয়ে ‘আজিজ ভাই’ বলেন, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ (Abdul Hamid) যেভাবে দেশ ছেড়ে গেছেন তা অত্যন্ত প্রশ্নবিদ্ধ। তিনি ছিলেন একটি হত্যা মামলার আসামি, অথচ গোয়েন্দা সংস্থা ও ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের সামনে দিয়েই তিনি নির্বিঘ্নে চলে যান। এরপর চারজন পুলিশ সদস্যকে চাকরিচ্যুত করা হয়, যা পুরো পুলিশ বাহিনীর মধ্যে ভয় তৈরি করেছে।

আজিজ ভাই বলেন, “পুলিশ অনেক কিছু করতে পারে, কিন্তু এখন তারা ‘টমাটাইজড’ হয়ে গেছে।” তার মতে, আগের ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় যেভাবে গায়েবি মামলা ও দমনপীড়ন চালানো হয়েছিল, সেই সংস্কৃতির প্রভাব এখনো বিদ্যমান।

প্রশাসনিক কাঠামোর দুর্বলতা ও সংস্কারের প্রয়োজন

আজিজ ভাই আরও বলেন, প্রশাসন ক্যাডারে ৯৫% ডিসি নিয়োগ পেয়েছে, যাদের বড় অংশ আগের ফ্যাসিস্ট সরকারের অনুসারী বলে অভিযোগ রয়েছে। অথচ আরও ২৫টি ক্যাডার রয়েছে যেখান থেকেও যোগ্য কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া যেত।

তার মতে, যারা সরকারি চাকরির সুযোগ নিয়ে অপরাধে জড়িয়েছে, তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে এবং যারা নির্দোষ তাদের জন্য সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দিলে নিরাপত্তা ফিরে আসত।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার হঠাৎ ক্ষমতায় এসেছে এবং রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকায় এখনো বুঝতে পারছে না কোথা থেকে শুরু করতে হবে। সুষ্ঠু প্রশাসনিক পরিবেশ ও রাজনৈতিক ভারসাম্য ফেরাতে কার্যকর সংস্কারের কোনো বিকল্প নেই।