লন্ডনে গুপ্ত মিশনে পাঠাতে চেয়েছিল র‌্যাব ও ভারতীয় গোয়েন্দারা: সুব্রত বাইন নিয়ে জুলকারনাইন সায়েরের বিস্ফোরক পোস্ট

আন্তর্জাতিক অপরাধ জগতের আলোচিত নাম সুব্রত বাইন (Subrata Bain) কে নিয়ে বিস্ফোরক তথ্য প্রকাশ করেছেন আল জাজিরার (Al Jazeera) অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের (JulkarNain Sayar)। বৃহস্পতিবার (৩০ মে) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে তিনি দাবি করেন, ভারতের ‘’ (RAW) এবং র‌্যাব (RAB) এর সাবেক কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান (Ziaul Ahsan) ও তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল (Asaduzzaman Khan Kamal) তাকে একটি “বড় টার্গেট” মিশনের জন্য লন্ডনে পাঠানোর পরিকল্পনা করেন।

ভারতের প্রশিক্ষণ, পাকিস্তানি পাসপোর্ট আর কানাডার প্রতিশ্রুতি

জুলকারনাইন সায়েরের তথ্যমতে, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের কলকাতা (Kolkata) থেকে সিলেটের (Sylhet) জৈন্তাপুর (Jaintapur) সীমান্ত দিয়ে তাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনে কলকাতা STF এবং র‌্যাব। এরপর তাকে র‌্যাব সদর দপ্তরে নেওয়া হয়, যেখানে সাক্ষাৎ করেন আসাদুজ্জামান খান কামাল, জিয়াউল আহসান এবং মনিরুল ইসলাম (Monirul Islam)।

সেখানে তাকে একটি মিশন দেওয়া হয়—যুক্তরাজ্যে বসবাসরত একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাকে হত্যা। সফল মিশনের বিনিময়ে কানাডা (Canada)তে পরিবারসহ স্থায়ী বসবাসের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। সেইসঙ্গে তার ‘পাকিস্তানি’ (Pakistan) পরিচয় নিশ্চিত করতে তার বেশভূষাও বদলাতে বলা হয়।

দীর্ঘ পথ—ভারত, চীন, দুবাই হয়ে লন্ডন মিশনের পরিকল্পনা

জুলকারনাইন জানান, ২০০১ সালে বিএনপি (BNP) সরকারের সময় খালেদা জিয়ার (Khaleda Zia) নির্দেশে শীর্ষ ২৩ অপরাধীর তালিকা তৈরি হয় এবং সুব্রতের নামে ১ লাখ টাকার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। এরপর সে পালিয়ে ভারত (India) চলে যায়।

কলকাতায় থাকাকালীন ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ ও মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স (MI)–এর মাধ্যমে মধ্যপ্রদেশউত্তর প্রদেশে কমান্ডো প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। তাকে পাঠানো হয় চীন (China), পরে দুবাইয়ে (Dubai) বিলাসবহুল ভিলায় রাখা হয়, যেখানে তার সঙ্গে যুক্ত হয় মোল্লা মাসুদ। ‘র’ এর পরামর্শে তাদের উদ্দেশ্য ছিল টাইগার মেমন (Tiger Memon) এর মাধ্যমে দাউদ ইব্রাহীমের (Dawood Ibrahim) নেটওয়ার্কে ঢোকা। তবে সে মিশন সফল হয়নি।

মোহাম্মদপুরে হত্যাকাণ্ড ও গোয়েন্দা সংযোগ

২০০৩ সালে ঢাকার (Dhaka) মোহাম্মদপুরে নাগাল্যান্ড স্বাধীনতার দাবিদার বম সম্প্রদায়ের এক নেতার স্ত্রী ও সন্তানকে হত্যা করে সুব্রত। একই এলাকায় পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্যবসায়ী মোস্তাকিম কাবাবের মালিক মোস্তাকিমকেও গুলি করে হত্যা করে। তার ‘উলফা’ (ULFA) নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল এবং বহুবার পরেশ বড়ুয়াকে হত্যার চেষ্টা করে।

লন্ডন মিশনের প্রস্তুতি ও ধ্বংস

জুলকারনাইন লিখেন, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে লন্ডন মিশনের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়। সুব্রতকে পাকিস্তানি পাসপোর্টে পাঠানোর কথা বলা হয়, এবং ‘র’ ও র‌্যাবের কর্মকর্তারা তাকে স্নাইপার প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করেন।

কিন্তু ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবে হাসিনা সরকার (Hasina Government) পতনের পর পরিস্থিতি বদলে যায়। জিয়াউল আহসানের নির্দেশে সুব্রতকে তার মেয়ে বিথির কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয় এবং পরবর্তী আদেশের জন্য অপেক্ষা করতে বলা হয়।

সাম্প্রতিক গ্রেফতার

সেনাবাহিনী (Army) সম্প্রতি কুষ্টিয়া (Kushtia) শহরের কালিশঙ্করপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে সুব্রত ও মোল্লা মাসুদকে গ্রেফতার করে। পরে হাতিরঝিল (Hatirjheel) এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় সুব্রতের দুই সহযোগী আরাফাত ও শরীফকে। অভিযানে উদ্ধার হয় ৫টি বিদেশি পিস্তল, ১০টি ম্যাগাজিন, ৫৩ রাউন্ড গুলি এবং একটি স্যাটেলাইট ফোন।

🔺 উল্লেখ্য, জুলকারনাইন সায়েরের পোস্টে উল্লেখিত তথ্যগুলো স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।