বাংলাদেশের (Bangladesh) সংবিধান ও রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ঐকমত্য কমিশন (Consensus Commission) প্রথম পর্যায়ের আলোচনা শেষ করেছে। কিন্তু প্রস্তাবিত সংস্কারের গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে বিএনপি (BNP), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী (Bangladesh Jamaat-e-Islami) এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (National Citizen Party) বা এনসিপির মধ্যে ব্যাপক মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে।
মতপার্থক্যের কারণ ও প্রতিক্রিয়া
প্রধানমন্ত্রী পদে মেয়াদ নির্ধারণ, সংসদে উচ্চকক্ষ গঠন, সাংবিধানিক নিয়োগ প্রক্রিয়া, গণভোটের বিধান, এবং প্রধান বিচারপতি নিয়োগসহ বেশ কিছু সংস্কার প্রস্তাবে বিএনপি বিরোধিতা করলেও অন্যদিকে জামায়াত এবং এনসিপি অধিকাংশ প্রস্তাবে একমত হয়েছে।
তারেক রহমান (Tarique Rahman), বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, এক সমাবেশে বলেন, “সংস্কারের অভিনব শর্তের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে আগামী জাতীয় নির্বাচনের ভবিষ্যৎ।”
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী (Amir Khasru Mahmud Chowdhury) বলেন, “যেগুলোতে ঐকমত্য হয়েছে সেগুলো দ্রুত কার্যকর করা হোক। বাকিগুলো পরে জনগণের মাধ্যমে ঠিক হবে।”
কমিশনের কৌশল ও পরিকল্পনা
অধ্যাপক আলী রীয়াজ (Professor Ali Riaz), ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি, জানান, “দলগুলোর মধ্যে অবস্থানগত ব্যবধান কমিয়ে এনে মাঝামাঝি অবস্থানে আনার চেষ্টা করা হবে।”
কমিশনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী মাসে দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনা শেষে ‘জুলাই সনদ’ নামে একটি চূড়ান্ত সংস্কার দলিল প্রকাশ করা হবে।
একমতের জায়গা ও বিরোধিতার তালিকা
- প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না দলীয় প্রধান — বিএনপির আপত্তি, জামায়াত-এনসিপি একমত
- সংসদে সংখ্যানুপাতিক উচ্চকক্ষ — বিএনপির বিরোধিতা
- গণভোটের বিধান — বিএনপির আপত্তি, এনসিপির সমর্থন
- নারী আসনে সরাসরি নির্বাচন — বিএনপি ও জামায়াতের বিরোধিতা, এনসিপির সমর্থন
- রাষ্ট্রীয় মূলনীতিতে বহুত্ববাদ — অধিকাংশ দলের আপত্তি
মতিউর রহমান আকন্দ (Matiur Rahman Akand), জামায়াতের মুখপাত্র বলেন, “দ্বিতীয় দফার বৈঠকে আমরা বিস্তারিত মত দেবো। আশা করছি চূড়ান্ত প্রস্তাব সেখানে নির্ধারিত হবে।”
আরিফুল ইসলাম আদীব (Ariful Islam Adib), এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক, বলেন, “গণভোট বা গণপরিষদের মাধ্যমেই সংস্কারের বাস্তবায়ন সম্ভব। বিএনপির আপত্তি থাকলেও অধিকাংশ দল এই মতেই একমত।”
বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে বিভাজন
বিএনপি চায়, নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমেই সাংবিধানিক সংস্কার হোক। অন্যদিকে, জামায়াত ও এনসিপি গণভোট বা গণপরিষদ চায়।
শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina) সরকারের পতনের মাধ্যমে জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ায় এই সংস্কার বাস্তবায়নের পথ এখনো অস্পষ্ট।
কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, “যারা ক্ষমতায় যাবেন, তাদের বাধ্যতামূলক প্রতিশ্রুতি নিতে হবে যেন তারা ক্ষমতায় গিয়েই সংস্কার বাস্তবায়ন করেন।”