আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যে নানা কৌশল গ্রহণ করছে সরকার। এসব কৌশলের মধ্যে রয়েছে বেশ কিছু পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব, অপ্রয়োজনীয় ব্যয় হ্রাস এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বরাদ্দ বৃদ্ধির পরিকল্পনা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (National Board of Revenue) সূত্রে জানা গেছে, এ বছর এমএস রডের উৎপাদন পর্যায়ে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের চিন্তা করছে সরকার। পাশাপাশি, আমদানিকৃত গাড়ি, ফ্রিজ, টেলিভিশন, এয়ার কন্ডিশন, বিদেশি ফল, ওভেন ও বিলাসী পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়ানো হবে। এর ফলে মধ্যবিত্তদের জীবনযাত্রার ব্যয়ে প্রভাব পড়তে পারে।
রাজস্ব আহরণে নতুন কৌশল
সরকারের রাজস্ব আহরণের প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় এই শুল্ক বৃদ্ধির চিন্তা এসেছে। এতে নির্বাচনি ব্যয়, শহীদ পরিবারকে সহায়তা, চিকিৎসা খাত এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বরাদ্দ বজায় রাখা সম্ভব হবে বলে মনে করছে সরকার।
অর্থ মন্ত্রণালয় (Ministry of Finance) জানিয়েছে, বাজেটে নির্বাচনি ব্যয়ের জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখা হবে, কারণ নির্বাচন একটি স্পর্শকাতর বিষয় এবং নির্বাচন কমিশনের প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়ন বাধ্যতামূলক।
বাজেটের আকার ও মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা
নতুন অর্থবছরের বাজেট আকার চলতি অর্থবছরের তুলনায় প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা কমিয়ে বাস্তবভিত্তিক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মূল লক্ষ্য হলো মূল্যস্ফীতিকে সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা। ২০২৫-২৬ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬.৫ শতাংশে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে, যেখানে গত মার্চে এই হার ছিল ৯.৩৫ শতাংশ।
দেশীয় শিল্প রক্ষায় উদ্যোগ
বাজেটে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে দেশীয় শিল্প রক্ষায়। যেসব বিলাসী পণ্য বাংলাদেশে উৎপাদিত হয় না, সেগুলোর ওপর শুল্ক বাড়ানোর মাধ্যমে আমদানি নিরুৎসাহিত করা হবে। ভূমি উন্নয়ন করের মতো খাত থেকেও রাজস্ব আহরণে কঠোর নির্দেশনার কথা জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে ভূমি উন্নয়ন কর থেকে উল্লেখযোগ্য রাজস্ব আদায় হয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাজেট ঘাটতি ও জিডিপি প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা
২০২৫-২৬ অর্থবছরেও বাজেট ঘাটতি জিডিপির পাঁচ শতাংশের নিচে রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। বিশ্বব্যাংক (World Bank), আইএমএফ (IMF) ও এডিবি (ADB) জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধি পাঁচ শতাংশের নিচে থাকতে পারে। তবে সরকার আগামী অর্থবছরে ৫.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
ভর্তুকি হ্রাসের পরিকল্পনা
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ (Dr. Salehuddin Ahmed) জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সিস্টেম লস কমানো এবং উৎপাদন খরচ হ্রাসের জন্য পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সরকার ভর্তুকির চাপ কমাতে এলএনজিতে ভর্তুকি হ্রাসের নীতিও গ্রহণ করেছে।
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বরাদ্দ বৃদ্ধি
আগামী বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে বরাদ্দ বৃদ্ধি পেতে যাচ্ছে। নতুন করে ৬ লাখ ২৪ হাজার মানুষ এ কর্মসূচির আওতায় আসবে। এতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ভাতা ৫০ থেকে ১০০ টাকা বাড়িয়ে সর্বনিম্ন ৬৫০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ৯০০ টাকায় উন্নীত করা হবে। বাজেটে মোট ১২টি ভাতাভুক্ত কর্মসূচিতে ১৯ হাজার ৭০৭ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকবে, যা চলতি বছরের তুলনায় ১ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা বেশি।