সংবিধান সংস্কারে ‘লিঙ্গ পরিচয়’ অন্তর্ভুক্তিতে ১৮০ শিক্ষক উদ্বিগ্ন

সংবিধান সংস্কার কমিশন (Constitution Reform Commission) প্রস্তাবিত সংবিধান সংস্কারে ‘লিঙ্গ পরিচয়’ বিষয়ক শব্দ ব্যবহারে বাংলাদেশ (Bangladesh)ের ১৮০ জন বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজের শিক্ষক উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। শনিবার (৩১ মে ২০২৫) তাঁরা এই উদ্বেগ জানিয়ে একটি লিখিত বিবৃতি প্রদান করেন।

‘লিঙ্গ’ শব্দ ব্যবহারে সমকামিতার বৈধতা দেওয়ার শঙ্কা

বিবৃতিতে বলা হয়, সংবিধানের ২৮ ও ২৯ অনুচ্ছেদে ‘নারী-পুরুষ ভেদ’ শব্দের পরিবর্তে অস্পষ্ট ও অসংজ্ঞায়িত ‘লিঙ্গ’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যা ‘লিঙ্গ পরিচয়’ বা ‘জেন্ডার আইডেন্টিটি’-এর মাধ্যমে এলজিবিটিকিউ+ (LGBTQ+) গোষ্ঠীর অধিকারকে সংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার পথ খুলে দেবে। এই প্রবণতাকে তাঁরা ধর্মীয়, সামাজিক এবং আইনগত কাঠামোর জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচনা করছেন।

সংস্কার কমিশনের বিভিন্ন প্রতিবেদনে লিঙ্গ পরিচয়ের ইঙ্গিত

বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন (Public Administration Reform Commission) এর প্রতিবেদনে ‘বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তিকরণ (Diversity and Inclusion)’ সুপারিশ করা হয়েছে, যা এলজিবিটিকিউ+ অন্তর্ভুক্তির দিকেই ইঙ্গিত বহন করে।

একইভাবে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন (Media Reform Commission) তাদের প্রতিবেদনে ‘নারী-পুরুষ’ এর পরিবর্তে ‘সব জেন্ডার’-এর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছে। পুলিশ সংস্কার কমিশন (Police Reform Commission) তাদের প্রতিবেদনে ‘নারী ও শিশুবান্ধব পুলিশিং’ এর পরিবর্তে ‘জেন্ডার ও শিশুবান্ধব পুলিশিং’ ব্যবহারের সুপারিশ করেছে।

এছাড়া নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন (Women Affairs Reform Commission)-ও সংবিধানের সংশ্লিষ্ট ধারায় ‘নারী-পুরুষ’ শব্দের পরিবর্তে ‘লিঙ্গ’ শব্দ ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছে।

ধর্মীয় মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলছেন শিক্ষকরা

শিক্ষকদের বিবৃতিতে বলা হয়, “বাংলাদেশের সামাজিক কাঠামো ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নৈতিকতার ওপর প্রতিষ্ঠিত। ইসলামসহ দেশের প্রচলিত ধর্মগুলোতে সমকামিতা স্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ। দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা এখনও বলবৎ, যা অপ্রাকৃতিক যৌন সম্পর্ককে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে।”

তাঁরা আরও বলেন, “সংবিধান সংস্কারে যদি এমন শব্দ বা ব্যাখ্যা আসে, যা দণ্ডবিধি ৩৭৭ ধারাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, তাহলে এটি দেশের প্রচলিত আইন ও সমাজব্যবস্থার মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি করবে এবং পরিবারকেন্দ্রিক সমাজ ব্যবস্থা হুমকির মুখে পড়বে।”

উন্নয়ন নয়, চাপিয়ে দেওয়া সংস্কার নয়

শিক্ষকরা বলেন, “ধর্ম, সংস্কৃতি ও মূল্যবোধের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করে কোনো সংস্কার চাপিয়ে দেওয়া কখনো উন্নয়ন হতে পারে না। নারী অধিকার ও মানবাধিকার অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, তবে তা সমাজের নৈতিক কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে।”

বিবৃতিদাতাদের পরিচয়

১৮০ জন শিক্ষক এই বিবৃতিতে সই করেছেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন:
– ৪৪ জন প্রফেসর
– ৩১ জন অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর
– ৬২ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর
– ৪৩ জন লেকচারার

বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক বিবরণ:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (University of Dhaka) – ৩৬ জন
বুয়েট (BUET) – ৭ জন
বুটেক্স (BUTEX) – ১৩ জন
সাস্ট (SUST) – ১২ জন
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (University of Chittagong) – ১১ জন
আইইউবি (IUB) – ৯ জন
কুয়েট (KUET) – ৫ জন
– মেডিকেল কলেজ – ৩৩ জন

বিবৃতিদাতাদের পূর্ণ তালিকা পাওয়া যাবে www.mullobodh.com ওয়েবসাইটে।