ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ (RAW)-এর হয়ে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে গোপন মিশনে কাজ করেছেন শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন (Subrata Bain)। তদন্তে জানা গেছে, তার সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন সহযোগী মোল্লা মাসুদ (Molla Masud)। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এই দুইজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম।
আন্তর্জাতিক মিশন ও প্রশিক্ষণ
সুব্রত বাইন স্বীকার করেছেন, তিনি নেপাল ও দুবাইয়ে ‘র’-এর হয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং বাংলাদেশেও একাধিকবার ‘টার্গেট মিশনে’ অংশ নিয়েছেন। এমনকি যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাকে হত্যার দায়িত্বও দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন তিনি। এই দায়িত্ব দিয়েছিলেন বাংলাদেশের একটি সাবেক সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
স্যাটেলাইট ফোন ও দূরবর্তী হামলার প্রশিক্ষণ
তদন্তে উঠে এসেছে, সুব্রতের কাছে একটি অত্যাধুনিক স্যাটেলাইট ফোন ছিল, যা মোল্লা মাসুদের মাধ্যমে সরবরাহ করেছিল ‘র’। বাংলাদেশে কথিত ‘আয়নাঘরে’ আটক থাকা অবস্থায় সুব্রতকে দেওয়া হয়েছিল দূর থেকে আঘাত হানার বিশেষ প্রশিক্ষণ।
জিজ্ঞাসাবাদে বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি
ডিবি সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার রাতে ও শুক্রবার দুপুরে একাধিক দফায় সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রাথমিকভাবে চুপ থাকলেও পরে সুব্রত স্বীকার করেন, তিনি নেপাল ও দুবাইয়ে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে কাজ করেছেন। বাংলাদেশে তার মিশনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন, তবে তদন্ত কর্মকর্তাদের প্রশ্নবানে আরও অনেক বিস্ফোরক তথ্য দেন।
ভারতের প্রশিক্ষণ ও যোগসূত্র
২০০১ সালে তৎকালীন সরকার ঘোষিত ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর তালিকায় নাম ছিল সুব্রতের। এরপর তিনি মোল্লা মাসুদকে নিয়ে ভারতে পালিয়ে যান। বেনাপোল সীমান্ত হয়ে তিনি যশোর (Jessore) আসতেন এবং বেজপাড়া এলাকায় বসবাস করতেন। এখানে বসে চাঁদাবাজি চালিয়ে আবার কলকাতায় ফিরে যেতেন।
সুব্রতকে কলকাতা পুলিশ গ্রেফতার করলে, আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী তানভীরুল ইসলাম জয় (Tanvirul Islam Joy) তাকে ছাড়ানোর ব্যবস্থা করেন। জয় ভারতের প্রশাসনে তার ব্যক্তিগত যোগাযোগ কাজে লাগিয়ে সুব্রতকে মুক্ত করেন। এরপর কলকাতার তৎকালীন পুলিশ কমিশনার এসকে চক্রবর্তীর আহ্বানে সুব্রত, জয় ও মোল্লা মাসুদ ‘র’ এবং ভারতীয় সেনা গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে সক্রিয় যোগাযোগে আসেন।
ভারতের অভ্যন্তরে প্রশিক্ষণ
‘র’-এর কর্মকর্তারা সুব্রত, মাসুদ ও তাদের আরেক সহযোগী মধু বাবুকে ভারতের উত্তর ও মধ্যপ্রদেশে কমান্ডো প্রশিক্ষণ দেন বলে জানা গেছে। এসব প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তারা লক্ষ্যবস্তুতে নির্ভুলভাবে হামলা চালানোর কৌশল রপ্ত করেন।
তদন্ত অব্যাহত
ডিবির যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম বলেন, “সুব্রত বাইন ও তার সহযোগীদের জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে। তারা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। আমরা এসব তথ্যের সত্যতা যাচাই করছি।”