ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর আওয়ামী লীগ (Awami League)-এর অনেক নেতা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। কারা কীভাবে পালিয়েছেন সে বিষয়ে মুখ খোলেন দলের আইন বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম (Sh M Rezaul Karim)। অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাংবাদিক ফজলুল বারীর ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি দেশ ছাড়ার বিস্তারিত ও নাটকীয় অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছেন।
‘একমাত্র আমি ভবনে ছিলাম, সবাই পালিয়ে গিয়েছিল’
রেজাউল করিম বলেন, ৫ আগস্ট রাতে তিনি ছিলেন ন্যাম ফ্ল্যাটে। পরিস্থিতির অবনতির পরও তিনি ধারণা করেছিলেন, সরকার পরিস্থিতি সামাল দেবে। কিন্তু সকালে জানতে পারেন, মব ভবনের সামনে হাজির এবং শুধু তিনিই ভবনে রয়ে গেছেন। কেয়ারটেকার ও পিয়ন এসে সতর্ক করেন—তাকে খুঁজছে আন্দোলনকারীরা।
তিনি বলেন, “আমি ফ্যান-লাইট বন্ধ করে ঘরে বসেছিলাম। আমার স্ত্রী বাথরুমে লুকিয়ে ছিলেন। একপর্যায়ে এক সময়কার উপকার পাওয়া এক ব্যক্তি তাকে উদ্ধার করতে এসে সহযোগিতা করেন।”
অসুস্থতার ভান করে বেরিয়ে যাওয়া
উক্ত ব্যক্তি তাকে বলেন, দ্রুত পোশাক পাল্টে বের হতে হবে। তিনি একটি গেঞ্জি ও স্পঞ্জ পায়ে দিয়ে, মাস্ক পরে পরিবারসহ বেরিয়ে যান। সিএনজিভাড়া পর্যন্ত ছিল না তাদের কাছে। পরে সাহায্য নিয়ে অ্যাপোলো হাসপাতালে (Apollo Hospital) যান, সেখান থেকে আত্মীয়ের বাসায় আশ্রয় নেন। পরে নিরাপত্তার কারণে সেখান থেকেও বসুন্ধরার (Bashundhara) একটি বাসায় যান এবং সেখানেও গোপনে থাকতে হয়।
‘ছাত্রলীগ নেতার অপহরণচেষ্টা ও মুক্তিপণের দাবি’
শ ম রেজাউল করিম বলেন, একদিন হঠাৎ তার দরজায় কড়া নাড়ে তারই উপজেলা ছাত্রলীগের (Chhatra League) সভাপতি তাপস চৌধুরী (Taposh Chowdhury)। সে জানায়, প্রশাসনের লোক ও হ্যাকারদের সঙ্গে সে এসেছে এবং ১২ কোটি টাকা দাবি করে। দর কষাকষি করে পরে পাঁচ কোটি টাকার বিনিময়ে মুক্তি দেওয়ার প্রস্তাব দেয়।
তারা রেজাউলকে জোর করে লিফটে তোলার চেষ্টা করলে তার এক স্টাফ মোটরসাইকেল নিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে গ্রামীণ এলাকায় নিয়ে যান।
সীমানা পেরিয়ে কলকাতা
পরিস্থিতির ভয়াবহতায় তিনি দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। নিজের পরিচয় গোপন রেখে সীমান্তে পৌঁছান। পরে কর্দামাক্ত পুকুর পেরিয়ে, তারকাটা ভেদ করে চার ঘণ্টার প্রচেষ্টায় বর্ডার ক্রস করেন। ওপারে পৌঁছে একজন প্রবাসী বাংলাদেশির বাসায় আশ্রয় নেন। পরে কলকাতায় (Kolkata) প্রবাসী আত্মীয়দের সহায়তায় স্থানীয় সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে পাসপোর্টে অ্যারাইভাল ও এক্সিটেড পারমিশন নিয়ে অন্য একটি দেশে চলে যান (যার নাম তিনি প্রকাশ করেননি)।
‘মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি’
শ ম রেজাউল করিম বলেন, “আমার কাছে এটা স্বপ্নের মতো। মনে হয় আমি মৃত্যুর ভেতর থেকে ফিরে এসেছি। আল্লাহর কুদরতি শক্তি ছাড়া এটা সম্ভব হতো না।”
এমন সময়, যখন ওবায়দুল কাদের (Obaidul Quader)-এর পালানোর বর্ণনা নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে, তখনই শ ম রেজাউল করিমের এই বক্তব্য নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।