বাংলাদেশে সামরিক ‘ডিফেন্স ইনোভেশন হাব’ গড়ছে জাপান, পাঠাচ্ছে আধুনিক অস্ত্র ও প্রযুক্তি

টোকিও (Tokyo-র হানিদা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেই বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ কূটনীতিক প্রফেসর ইউনুস (Professor Yunus)-এর মুখে ফুটে উঠেছিল কৌশলী দৃঢ়তা। সফরটি নিছক কূটনৈতিক নয়—এটি বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনাস্বরূপ।

দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশ (Bangladesh) সামরিক সরঞ্জামে প্রধানত চীনের ওপর নির্ভরশীল ছিল। আংশিকভাবে তুরস্ক থেকেও প্রযুক্তি এসেছে। এবার ভূরাজনৈতিক সমীকরণে পরিবর্তন এনে জাপান (Japan) সামরিক সহায়তা নিয়ে সরাসরি মঞ্চে এসেছে।

চার দিক থেকে সামরিক চুক্তি

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জাপান বাংলাদেশকে একটি চতুর্মাত্রিক সামরিক প্যাকেজ দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে উন্নত নজরদারি রাডার, সীমান্ত পর্যবেক্ষণের ড্রোন, এনক্রিপ্টেড সামরিক যোগাযোগব্যবস্থা এবং আধুনিক প্রশিক্ষণ সুবিধাসহ একটি পূর্ণাঙ্গ ‘ডিফেন্স ইনোভেশন হাব’। এটি বাংলাদেশে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ সামরিক প্রযুক্তি অবকাঠামো গড়ে তুলবে।

প্রযুক্তি নয়, চায় সক্ষমতা

২৯ মে অনুষ্ঠিত নিক্কেই ফোরামে (Nikkei Forum)-র ফাঁকে প্রফেসর ইউনুস ও জাপানের প্রধানমন্ত্রী সিগরো ইসেবা (Shigeru Iseba)-র মধ্যে একান্ত বৈঠকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে চূড়ান্ত আলোচনা হয়—প্রযুক্তি হস্তান্তর, যৌথ গবেষণা এবং স্থানীয় উৎপাদন। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শুধু সরঞ্জাম নয়, স্বাধীন প্রযুক্তিগত সক্ষমতার দাবি জানানো হয়, যার প্রতি ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে জাপান।

নিরাপত্তা ও ভূরাজনীতি একসঙ্গে

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই চুক্তির বাস্তবায়নে বাংলাদেশের সীমান্ত সুরক্ষা, সন্ত্রাস প্রতিরোধ, বঙ্গোপসাগর (Bay of Bengal) সুরক্ষা এবং তথ্য যুদ্ধ প্রতিরোধে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হবে।

তবে প্রশ্ন উঠেছে—এই প্রযুক্তির লক্ষ্য কী? সামরিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি কেবল বহিরাগত হুমকি নয়, অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা তৎপরতাও নজরদারির আওতায় আনবে। ঢাকার কিছু তথাকথিত গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিদেশি সংস্থার হয়ে তথ্য সংগ্রহের অভিযোগ ইতিমধ্যে গোয়েন্দা রাডারে এসেছে।

দক্ষিণ এশিয়ায় জাপানের নতুন ভূমিকায় বাংলাদেশ

জাপান তাদের প্রতিরক্ষা শিল্পের জন্য নতুন বাজার খুঁজছে, যেখানে বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময় গন্তব্য। টোকিও মনে করে, বাংলাদেশকে কৌশলগত ঘাঁটিতে পরিণত করতে পারলে ভারতের প্রভাব ও চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (Belt and Road Initiative)-এর প্রভাব কমানো সম্ভব।

তরুণ সেনা ও প্রযুক্তিবিদদের জাপানে নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথাও ভাবছে টোকিও। এটি কেবল প্রতিরক্ষা নয়, বরং আঞ্চলিক নেতৃত্বে বাংলাদেশের অবস্থানকেও নতুন করে সংজ্ঞায়িত করবে।

কৌশলের আড়ালে রাজনীতি?

সফরের শেষ দিন টোকিওর বিমানবন্দরে এক সাংবাদিক যখন জিজ্ঞেস করেন, এই চুক্তি কি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ উত্তাপ বাড়াবে? তখন প্রতিনিধিদলের এক সদস্য শুধু হালকা হেসেছিলেন। সেই হাসির আড়ালে ছিল একটি বার্তা—শত্রু কেবল সীমান্তে নয়, প্রাসাদের ছায়াতেও লুকিয়ে থাকতে পারে।

ঢাকায় ফিরে দেখা গেছে, এই চুক্তি ঘিরে অভ্যন্তরীণ কিছু গোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধ ও সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। একটি প্রতিবেশী দেশের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ঢাকার কিছু মহল এই চুক্তির বিরোধিতা করছে বলে জানা গেছে। গোয়েন্দা নজরদারির আওতায় রয়েছে বিষয়টি।

সবশেষে প্রশ্ন থেকে যায়—এই সহযোগিতা কি শুধু অস্ত্রের লেনদেন? না কি এটি দক্ষিণ এশিয়ায় কৌশলগত ভারসাম্য গঠনের সূচনা? উত্তর সময়ই দেবে। তবে একথা নিশ্চিত, যখন প্রথম জাপানি সামরিক চালান চট্টগ্রাম বন্দরে (Chattogram Port) পৌঁছাবে, তখন শুধু একটি বাক্স নয়, দক্ষিণ এশিয়ার নতুন নিরাপত্তা মানচিত্রের একটি অধ্যায়ও উন্মোচিত হবে।