জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বৈধতা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায় আজ

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর (Bangladesh Jamaat-e-Islami) রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন বৈধ কি না, তা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)। আজ রোববার (১ জুন) আপিল বিভাগ (Appellate Division) এই বিষয়ে রায় ঘোষণা করবে।

কার্যতালিকার শীর্ষে মামলাটি

দলটির করা আপিল মামলাটি আপিল বিভাগের কার্যতালিকার এক নম্বরে রয়েছে। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ (Syed Refaat Ahmed) এর নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের বেঞ্চ ১৪ মে শুনানি শেষে রায়ের জন্য ১ জুন দিন ধার্য করেন।

পক্ষগুলোর বক্তব্য

জামায়াতের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেন আইনজীবী এহসান এ সিদ্দিক (Ehsan A Siddiq), ইমরান এ সিদ্দিক (Imran A Siddiq) এবং মোহাম্মদ শিশির মনির (Mohammad Shishir Monir)। অন্যদিকে নির্বাচন কমিশনের (Election Commission) পক্ষে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম (Towhidul Islam)।

জামায়াতের আইনজীবীরা দাবি করেন, দলটি স্বাধীনতার পর থেকে প্রতিটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছে এবং দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ২০০৮ সালে নিবন্ধন পাওয়ার পর হাইকোর্ট তা বাতিল করে, যা তাদের মতে ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

আইনজীবী শিশির মনির বলেন, “জামায়াতের নিবন্ধন ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল—দুটিই বিচার বিভাগের রাজনৈতিকীকরণের অংশ। যাঁরা নিবন্ধন বাতিল করেছিলেন, তাঁরা উচ্চ আদালতকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছেন।”

শুনানিতে জামায়াতের নির্বাচনী প্রতীক বাতিলের বিষয়টিও তোলা হয়। আইনজীবীরা নির্বাচন কমিশন যেন সময়োপযোগী ও যথাযথ সিদ্ধান্ত নেয়, সেই বিষয়ে আদালতের নির্দেশনার আবেদন জানান।

নিবন্ধন বাতিলের প্রেক্ষাপট

২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন প্রক্রিয়া চালু করে নির্বাচন কমিশন। সে সময় জামায়াতসহ ৩৮টি দল নিবন্ধিত হয়।

২০০৯ সালে তরিকত ফেডারেশন (Tarikat Federation) এর নেতা সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী (Syed Rezaul Haque Chandpuri)সহ ২৫ জন ব্যক্তি হাইকোর্টে রিট করে জামায়াতের নিবন্ধনকে চ্যালেঞ্জ জানান। এর পর ২০১৩ সালের ১ আগস্ট হাইকোর্ট দলটির গঠনতন্ত্রকে সংবিধানবিরোধী উল্লেখ করে নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে।

এই রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াত আপিল করে, যা দীর্ঘদিন ঝুলে ছিল। ২০১৮ সালে নির্বাচন কমিশন হাইকোর্টের রায়ের ভিত্তিতে দলটির নিবন্ধন বাতিল করে।

২০২৩ সালের আগস্টে জামায়াত আপিল পুনরুজ্জীবনের আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করে এবং একই বছরের ৩ ডিসেম্বর থেকে শুনানি শুরু হয়। শেষ শুনানি অনুষ্ঠিত হয় ১৪ মে।

রাজনৈতিক মাঠে ফেরা নির্ভর করছে রায়ের ওপর

দলটি আশাবাদী, সুপ্রিম কোর্ট তাদের পক্ষে রায় দিয়ে রাজনৈতিক কার্যক্রমে ফেরার পথ খুলে দেবে। তবে আদালতের আজকের রায়ই নির্ধারণ করবে, বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে জামায়াতে ইসলামীর ভবিষ্যৎ কতটা নিশ্চিত।