সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমকে ‘দু-মুখো সাপ’ বললেন নাজিরপুর উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি

পিরোজপুর (Pirojpur) জেলার নাজিরপুর উপজেলা ছাত্রলীগের (Nazirpur Upazila Chhatra League) সভাপতি তরিকুল ইসলাম তাপস চৌধুরী (Tarikul Islam Taposh Chowdhury) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ্য সমালোচনার মাধ্যমে সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম (Sh M Rezaul Karim)–কে ‘দু-মুখো সাপ’ আখ্যা দিয়েছেন। শনিবার (৩১ মে) সন্ধ্যা ৬টায় নিজের ফেসবুক আইডিতে প্রকাশিত এক দীর্ঘ পোস্টে তিনি এ অভিযোগ করেন।

ছাত্রলীগ নেতার বিস্ফোরক ফেসবুক পোস্ট

সাবেক আহ্বায়ক তরিকুল বর্তমানে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং উপজেলা শেখমাঠিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (Sheikhmatia Union Parishad) চেয়ারম্যান আতিয়ার রহমান চৌধুরী নান্নু (Atiar Rahman Chowdhury)–র ছোট ভাই।

ফেসবুক পোস্টে তরিকুল অভিযোগ করেন, শ ম রেজাউল করিম একজন ভালো আইনজীবী হতে পারেন, কিন্তু ভালো মানুষ নন। নিজের স্বার্থে যেকোনো ভয়ঙ্কর কাজ করতেও তিনি পিছপা নন বলেও দাবি করেন তিনি।

ওয়ান-ইলেভেন, শিশু মুক্তিযোদ্ধা ও টাকা লেনদেন নিয়ে বিস্ফোরণ

পোস্টে আরও উল্লেখ করা হয়, রেজাউল করিম ওয়ান-ইলেভেনের সময় নাটকীয়ভাবে বাসা থেকে পালান এবং নিজের স্ত্রী বা আত্মীয়ের সাহায্যে নয়, বরং অজানা উপায়ে দেশ ছাড়েন। তরিকুল প্রশ্ন তোলেন—“যার স্ত্রী মামলা করেছেন, তিনিই আবার কিভাবে আন্দোলনের সমন্বয়ক হন?” সেই সাথে রেজাউলের ‘শিশু মুক্তিযোদ্ধা’ সনদকেও ভুয়া বলে দাবি করেন তিনি।

তরিকুল আরও বলেন, রেজাউল তাকে ‘টাকা দিয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বানিয়েছেন’—এমন দাবি মিথ্যা। তিনি পাল্টা প্রশ্ন তোলেন, যদি টাকা দিয়ে বানিয়ে থাকেন, সেটা কার মাধ্যমে, কখন এবং কাদের হাতে?

পালিয়ে যাওয়া ও অপহরণ চেষ্টার পাল্টা ব্যাখ্যা

ছাত্রলীগ নেতা জানান, একদিন রেজাউল করিম তাকে ফোন করে দেখা করতে বলেন। দেখা হওয়ার পর রেজাউল তাকে সীমান্তে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন এবং এক লাখ টাকা হাতে তুলে দেন, যা তরিকুল নিতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর রেজাউল ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে বিদায় করতে বলেন।

তিনি আরও জানান, রেজাউল যখন দেশ ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন তার আত্মীয়দের সহযোগিতায় তাকে নিয়ে পালিয়ে যান। তিনি বাধা দিতে গেলে রেজাউলের আত্মীয়দের হাতে টানাহেঁচড়ার শিকার হন।

ব্যক্তিগত জীবন ও ধর্মীয় মূল্যবোধ নিয়েও অভিযোগ

তরিকুল রেজাউলের পারিবারিক জীবনের দ্বিচারিতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তিনি দাবি করেন, রেজাউলের মেয়ে একজন খ্রিষ্টান ব্রিটিশ নাগরিককে বিয়ে করেছেন, যা তার কথিত ইসলামী আদর্শের সাথে সাংঘর্ষিক।

অতীতের বন্ধুত্ব ও বর্তমানের দ্বন্দ্ব

পোস্টে তরিকুল উল্লেখ করেন, একসময় তিনি রেজাউলের ঘনিষ্ঠ অনুসারী ছিলেন এবং তার রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠায় সর্বোচ্চ ভূমিকা রেখেছেন। কিন্তু বর্তমানে তারা মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, রেজাউল রাজনৈতিকভাবে তাকে ও তার বড় ভাইকে দুর্বল করতে মিথ্যাচার করছেন।

পালিয়ে যাওয়ার পটভূমি ও সাক্ষাৎকার প্রসঙ্গ

প্রসঙ্গত, গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শ ম রেজাউল করিম দেশ ছেড়ে যান। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, দেশ ছাড়ার আগ মুহূর্তে অপহরণের শিকার হওয়ার চেষ্টা হয়েছিল এবং ওই ঘটনায় তরিকুল ইসলাম তাপসকে অভিযুক্ত করেন রেজাউল।

এই বিষয়ে ইউটিউব সাক্ষাৎকারে রেজাউল দাবি করেন, তিনি ‘মব’ এর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন এবং সেই সময় তার পিছু ধাওয়া করেছিলেন তরিকুল।

তবে এখন তরিকুল ইসলাম চৌধুরী সেই অভিযোগ পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করে পাল্টা নানা বিস্ফোরক অভিযোগ উত্থাপন করেছেন।