যশোরে পলাতক আওয়ামী চেয়ারম্যানদের আশ্রয়দাতা বিএনপি নেতারা, চলছে পুনর্বাসনের গোপন চুক্তি

যশোর (Jashore) জেলার বিভিন্ন উপজেলায় আওয়ামী লীগ (Awami League)–এর পলাতক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যানদের এলাকায় ফিরিয়ে আনতে সহযোগিতা করছেন স্থানীয় বিএনপি (BNP) নেতাকর্মীদের একটি অংশ। অভিযোগ উঠেছে, মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে এসব চেয়ারম্যানদের পুনর্বাসন, নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক শেল্টার দেওয়া হচ্ছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে একাধিক বিএনপি নেতাও এ অভিযোগ স্বীকার করেছেন।

তিন উপজেলার সর্বাধিক অভিযোগ

মণিরামপুর, চৌগাছা এবং কেশবপুর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি অভিযোগ উঠেছে। মণিরামপুরে শ্যামকুড় ইউপির আলমগীর হোসেন, ভোজগাতির আব্দুর রাজ্জাক, হরিদাসকাটির আলমগীর কবির লিটন, খেদাপাড়ার আব্দুল আলিম জিন্নাহ এলাকায় ফিরেছেন আসাদুজ্জামান মিন্টু (Asaduzzaman Mintu) ও নিস্তার ফারুকের সহায়তায় বলে অভিযোগ রয়েছে। অনৈতিক সহযোগিতার দায়ে নিস্তার ফারুককে ইতোমধ্যে বহিষ্কার করা হয়েছে।

অর্থের বিনিময়ে শেল্টার?

চেয়ারম্যান পুনর্বাসনে ৪০ লাখ টাকা পর্যন্ত লেনদেনের প্রস্তাব এসেছে বলে স্বীকার করেছেন বিএনপি নেতা মিন্টু। যদিও তিনি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। চৌগাছার ফুলসারা ইউপি চেয়ারম্যান মেহেদী মাসুদ চৌধুরী বিএনপি নেতাদের সহায়তায় ফিরে আসলেও পরে গ্রেপ্তার হন।

চৌগাছা ও কেশবপুরের বিভিন্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের শেল্টার দিচ্ছেন যুবদল ও বিএনপির ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ের নেতারা। এদের মধ্যে রয়েছেন সাইফুল ইসলাম, ডা. আব্দুস সামাদ, শরিফুজ্জামান শিমুল, আব্দুল আলিম, এমএ সালাম, জহুরুল ইসলাম, ওহিদুল ইসলাম মেম্বার ও বাবলুর রহমান মেম্বার।

বিএনপি নেতাদের প্রতিক্রিয়া

উপজেলা বিএনপি সভাপতি এমএ সালাম বলেন, “দলের জন্য আত্মীয়তার সম্পর্ক ত্যাগ করেছি।” তবে তৃণমূলের নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করেন না। কেশবপুর পৌর বিএনপি সভাপতি আব্দুস সামাদ বিশ্বাস সব অভিযোগকে অস্বীকার করেন।

বাঘারপাড়া উপজেলার মঞ্জুর রশিদ স্বপন গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে থাকলেও অন্যরা প্রকাশ্যে থাকছেন বলে জানা গেছে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা টিএস আইয়ুব (TS Ayub)–এর বিরুদ্ধে শেল্টার দেওয়ার অভিযোগ উঠলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।

ঝিকরগাছা উপজেলার শংকরপুর ও হাজিরবাগ ইউপির চেয়ারম্যানদের আশ্রয় দিয়েছেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা বলে অভিযোগ। এর মধ্যে মাস্টার ফয়জুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করলেও জামশেদ আলী দাবি করেন, তাঁরা প্রশাসক নিয়োগের জন্য আবেদন করেছেন।

অভয়নগরের চলিশিয়া ইউপি চেয়ারম্যান সানা আব্দুল মান্নানও বিএনপির স্থানীয় দুই নেতার সহায়তায় এলাকায় ফিরেছেন বলে অভিযোগ।

জেলা বিএনপির অবস্থান

যশোর জেলা বিএনপি (Jashore District BNP)–র সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকন স্বীকার করেছেন, দলের কিছু নেতা এসব কার্যকলাপে যুক্ত। সভাপতি সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেছেন, “অভিযোগকে অমূলক বলতে পারছি না। তবে প্রমাণ ছাড়া ব্যবস্থা নেওয়া যায় না।”

প্রশাসনিক পদক্ষেপ

বর্তমানে যশোর জেলার ৯৩টি ইউপির মধ্যে ২৮টিতে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিছু ইউপিতে প্যানেল চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করছেন। স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক রফিকুল হাসান বলেন, অপসারণ চলমান প্রক্রিয়া, সংখ্যাটি আরও বাড়তে পারে।