স্থানীয় প্রশাসনের ভেঙে পড়া কাঠামো ও সেবা সংকটের সমাধানে নির্বাচন প্রয়োজন: আসাদুজ্জামান ফুয়াদ

এবি পার্টি (AB Party)র সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ (Asaduzzaman Fuad) দাবি করেছেন, দেশে স্থানীয় প্রশাসনের কাঠামো কার্যত ভেঙে পড়েছে এবং এর ফলে জনগণ চরম সেবা সংকটে ভুগছে।

শনিবার (১ জুন) এক টেলিভিশন টকশোতে তিনি বলেন, “বর্তমানে এমন অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, যেখানে নির্বাচন ছাড়া এই সংকট নিরসন সম্ভব নয়।”

নির্বাচিত প্রতিনিধির অভাব ও প্রশাসনিক শূন্যতা

ফুয়াদ বলেন, “এখন এমন এক সময়ে বাস করছি, যখন কেন্দ্রীয় থেকে স্থানীয় পর্যায় পর্যন্ত কোথাও কোনো নির্বাচিত প্রতিনিধি নেই। এমনকি ’৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়েও পঞ্চায়েত চেয়ারম্যান, মেম্বার ছিলেন, অথচ এখন তারা নেই।”

তার দাবি, অধিকাংশ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বার আওয়ামী লীগ (Awami League) সমর্থিত হলেও তারা বর্তমানে পলাতক। ফলে দায়িত্ব পালন করছেন দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীরা, যার ফলে সেবাব্যবস্থা ধ্বংসপ্রায়।

বিকল্প প্রস্তাব ও দলের সুপারিশ

ফুয়াদ বলেন, “আমি বারবার বলে এসেছি—বিএনপি (BNP)- জামায়াত (Jamaat) পটভূমি থেকে যারা কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিলে স্থানীয় কাঠামো কিছুটা হলেও সচল হতো।”

তিনি অভিযোগ করেন, “আপনারা সিটি কর্পোরেশন, উপজেলা, জেলা পরিষদ সব বাতিল করেছেন, অথচ সেসব নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হয়নি। তাহলে কেন এই বাতিলের সিদ্ধান্ত? আপনি কি বিকল্প কিছু ভেবেছেন?”

সরকারি ভুল সিদ্ধান্ত ও প্রশাসনিক দুর্বলতা

ফুয়াদের মতে, সরকার নির্বাচিত প্রতিনিধি ছাড়াই প্রশাসনে দায়িত্ব দিচ্ছে তাদের অনুগতদের, যারা ১৬ বছর ধরে শাসকদলের দালালি করেছে এবং রাতের ভোটে অংশ নিয়েছে। “তারা সেনা সদস্যদের দিকেও গুলি চালিয়েছে, অথচ কোনো শাস্তি হয়নি।”

তিনি অভিযোগ করেন, “এই প্রশাসনিক ভেঙে পড়া একটি নীতিগত ব্যর্থতা। এটি এক ধরনের কাঠামোগত ধ্বংস।”

এলজিআরডি মন্ত্রী ও বিএনপির ভূমিকা

ফুয়াদ বলেন, তিনি সাবেক এলজিআরডি মন্ত্রী হাসান আরিফ (Hasan Arif) এর সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছেন এবং মন্ত্রীও স্বীকার করেছেন যে সরকার ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এছাড়া বিএনপির পক্ষ থেকেও এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ে (LGRD Ministry) চিঠি দিয়ে দাবি করা হয়েছে, বিএনপি সমর্থিত মেয়রদের দায়িত্ব ফিরিয়ে দিতে হবে।

জনগণের দুর্ভোগ

ফুয়াদ বলেন, “জন্মনিবন্ধন, এনআইডি, পাসপোর্ট—সবকিছুর জন্য মানুষ ছয় মাস ঘুরছে কিন্তু কোনো সার্টিফিকেশন পাচ্ছে না। কারণ ইউনিয়ন পরিষদ নেই।”

তিনি বলেন, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোও সেবা দিতে ব্যর্থ, যেখানে পুরোনো ঠিকাদাররা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু নতুনরা সুযোগ পাচ্ছে না।

স্থায়ী সমাধানের আহ্বান

সবশেষে আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, “আপনি যদি মনে করেন নির্বাচিত প্রতিনিধি ছাড়া কাউকে দায়িত্ব দেবেন না, তাহলে দ্রুত সুষ্ঠু নির্বাচন দিন। অন্তত মানুষ সেবা পাবে, বাঁচবে।”

তিনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (Dhaka South City Corporation)সহ গোটা স্থানীয় প্রশাসন কাঠামোর সংস্কারের আহ্বান জানান এবং বলেন, “হাজার হাজার জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, পৌরসভা ইউনিট রয়েছে—এসব সমস্যার স্থায়ী সমাধানে ‘ম্যাক্রো রেজল্যুশন’ দরকার।”