শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)-র বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই মাসজুড়ে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও দমন-পীড়নের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার প্রথম দিনের শুনানি সরাসরি সম্প্রচার করেছে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন—যা বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম কোনো সাবেক রাষ্ট্রপ্রধানের বিচার সরাসরি সম্প্রচারের নজির গড়েছে।
৬,৫০০ পৃষ্ঠার অভিযোগ উপস্থাপন
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম (Tajul Islam) আদালতে মোট ১৩ খণ্ডে বিভক্ত ৬,৫০০ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র উপস্থাপন করেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, শেখ হাসিনার নির্দেশেই সাধারণ আন্দোলনকারীদের গুম, খুন এবং নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। ১৩৫ পৃষ্ঠার মূল অভিযোগে তাকে ‘অপরাধের নিউক্লিয়াস’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
‘গ্যাং অব ফোর’-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ
প্রসিকিউশনের দাবি অনুযায়ী, তৎকালীন সরকারের চার শীর্ষ নেতা—ওবায়দুল কাদের (Obaidul Quader), আসাদুজ্জামান খান কামাল (Asaduzzaman Khan Kamal), সালমান এফ রহমান (Salman F Rahman) এবং আনিসুল হক (Anisul Haque)—দেশজুড়ে সহিংস অভিযানে প্রশাসনকে উসকে দেন। এঁদের ‘গ্যাং অব ফোর’ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, এই চতুষ্টয়ের নির্দেশনায় পুলিশ, র্যাব ও সরকারি দলের কর্মীরা নির্বিচারে গুলি চালায়, যার ফলে ৫ আগস্ট ২০২৪ পর্যন্ত প্রায় ১,৫০০ জন নিহত এবং ২৫,০০০ জনের বেশি আহত হন।
‘ক্রিমিনাল অর্গানাইজেশন’ তকমা দাবি
প্রসিকিউশন পক্ষ থেকে আরও দাবি করা হয়, আওয়ামী লীগ (Awami League), যুবলীগ (Jubo League), ছাত্রলীগ (Chhatra League) এবং ১৪ দলীয় জোট মানবতাবিরোধী অপরাধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছে, তাই তাদের ‘ক্রিমিনাল অর্গানাইজেশন’ হিসেবে ঘোষণা করা যুক্তিযুক্ত।
গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি
আদালত শেখ হাসিনা ও তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে নতুন করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন। এই পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মোর্তূজা মজুমদার (Justice Md. Golam Mortuza Majumder) এবং তাঁর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ।
বাকি দুই সদস্য হলেন—বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ (Justice Md. Shafiul Alam Mahmud) ও মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী (Mohitul Haque Enam Chowdhury)।
বিচার কোনো প্রতিশোধ নয়: প্রসিকিউশন
চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, “এটি কোনো প্রতিশোধমূলক বিচার নয়। এটি হবে প্রমাণনির্ভর, নিরপেক্ষ ও ন্যায়ভিত্তিক বিচার। লক্ষ্য হচ্ছে—বাংলাদেশকে একটি ফ্যাসিবাদমুক্ত নতুন অধ্যায়ে নিয়ে যাওয়া।”
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, “এই বিচার প্রক্রিয়া একটি অন্ধকার সময়ের অবসান ঘটাবে এবং বাংলাদেশের জন্য এক নতুন রেনেসাঁর সূচনা করবে।”