সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)-র বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ গঠন করেছে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) (International Crimes Tribunal – ICT)। ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে গণআন্দোলনের সময় ১৪০০ জন মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনায় তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনা হয়েছে। আন্দোলনে সহিংসতা উসকে দেওয়ার অভিযোগে তিনি এবং তার দুই সহযোগী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পাঁচটি করে অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের দৃষ্টি
এএফপি (AFP) জানিয়েছে, ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা সরকারের সিনিয়র নেতাদের আইসিটির আওতায় বিচারের মুখোমুখি করা হচ্ছে। আদালতের প্রধান প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম (Mohammad Tajul Islam) তার সূচনা বক্তব্যে বলেন, অভিযুক্তরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও দলীয় সশস্ত্র বাহিনীকে ব্যবহার করে গণআন্দোলন দমন করেছেন।
তাজুল ইসলাম আরও জানান, শেখ হাসিনা এবং দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গণহত্যা, উসকানি, সহযোগিতা, ষড়যন্ত্র এবং তা প্রতিহত করতে ব্যর্থতার অভিযোগ আনা হয়েছে। তদন্তে প্রাপ্ত ভিডিও, অডিও, হেলিকপ্টার রেকর্ড ও ভুক্তভোগীদের সাক্ষ্য এসব অভিযোগের ভিত্তি।
উচ্চপ্রোফাইল আসামিরা
এই মামলার অন্যান্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন (Chowdhury Abdullah Al-Mamun) ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল (Asaduzzaman Khan Kamal)। মামুন বর্তমানে হেফাজতে থাকলেও, কামাল পলাতক।
রিপোর্ট অনুযায়ী, হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগের মধ্যে একটি হলো, রংপুরে ছাত্রনেতা আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা করতে নির্দেশ দেওয়া। এই হত্যার ভিডিও বিভিন্ন টেলিভিশনে প্রচারিত হয়েছে।
সরাসরি সম্প্রচার ও বিচার প্রক্রিয়া
প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে কোনো বিচারিক কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচার করে বাংলাদেশ টেলিভিশন (Bangladesh Television)। প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, এই বিচার পক্ষপাতহীন হবে এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রতিশোধমূলক নয় বরং ন্যায়ের জন্য।
অতীতের বিতর্কিত ইতিহাস
শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে আইসিটি গঠন করেছিলেন ১৯৭১ সালের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে। তবে ওই আদালতের মাধ্যমে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ইতিপূর্বে অনেকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তন
২০২৪ সালের আন্দোলনে ছাত্রদের নেতৃত্বে ক্ষমতাচ্যুত হন শেখ হাসিনা। তার সরকারকে দমন-পীড়নের মাধ্যমে ১৪০০ মানুষ হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। এরপর তিনি ভারতে পালিয়ে যান এবং বর্তমানে স্বেচ্ছা নির্বাসনে আছেন।
মে মাসে আওয়ামী লীগ (Awami League) নিষিদ্ধ ঘোষণা করে অন্তর্বর্তী সরকার (Interim Government)। একইসাথে, সুপ্রিম কোর্ট জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন পুনর্বহাল করে, ফলে দলটি আবার নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে।
ভারতের এক অনলাইন পোর্টাল এবং আল জাজিরা (Al Jazeera) তাদের প্রতিবেদনে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ‘সমন্বিত ও বিস্তৃত হত্যাযজ্ঞ’ পরিচালনার অভিযোগ তুলে ধরেছে।