২০২৪ সালের ‘বর্ষা বিপ্লব’ বা ‘জুলাই অভ্যুত্থানে’ সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (Sheikh Hasina)সহ তিনজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক চার্জশিট দাখিল করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম (Chief Prosecutor Mohammad Tajul Islam)। রোববার আদালতে তার আবেগঘন শুনানিতে এজলাসে নেমে আসে পিনপতন নীরবতা।
চার্জশিট ও শুনানির বিবরণ
১৩৫ পৃষ্ঠার চার্জশিটে বলা হয়েছে, ‘অপরাধের নিউক্লিয়াস’ ছিলেন শেখ হাসিনা। তিনি ছিলেন হত্যাযজ্ঞের মূল পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা। এই বিচারকাজকে বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি নজিরবিহীন অধ্যায় হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে, কারণ এটি বাংলাদেশ টেলিভিশন (Bangladesh Television)-এ সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
প্রসিকিউটরের ভাষ্যে প্রতিধ্বনিত ইতিহাস
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, “২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের নারকীয় হত্যাযজ্ঞ সারা বিশ্ব ও বাংলাদেশকে স্তব্ধ করে দিয়েছিল। তরুণ-তরুণী, নারী, শিশু এবং সাধারণ মানুষ যারা বৈষম্য ও কোটাবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল, তাদের ওপর রাষ্ট্রীয় বাহিনী, দলীয় সন্ত্রাসী ও সহায়ক সংগঠনের সদস্যরা নির্বিচারে হামলা চালিয়েছে।”
তিনি জানান, এই হত্যাকাণ্ডগুলো ছিল রাষ্ট্রীয় শক্তির চূড়ান্ত অপব্যবহার, যা বাংলাদেশকে পরিণত করেছিল ৫৬ হাজার বর্গমাইলের একটি বধ্যভূমিতে।
অভিযুক্ত ও অপরাধের বিবরণ
চার্জশিটে অভিযুক্ত হিসেবে রয়েছেন:
- সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল (Asaduzzaman Khan Kamal)
- তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন (Chowdhury Abdullah Al-Mamun)
প্রধান পাঁচটি অভিযোগ:
- গণভবনে উসকানিমূলক বক্তব্য: ১৪ জুলাই শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্যের মাধ্যমে সহিংসতার উসকানি দেন।
- হেলিকপ্টার ও ড্রোন ব্যবহার: সরকার বিরোধীদের দমনে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দেন।
- রংপুরে ছাত্র আবু সাঈদের হত্যা: বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (Begum Rokeya University)-এর সামনে ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যা।
- চানখাঁরপুলে ছয় ছাত্র হত্যা: ঢাকার চানখাঁরপুলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে ছয় ছাত্র নিহত।
- আশুলিয়ায় হত্যাকাণ্ড ও লাশ পোড়ানো: ছয়জনকে হত্যা করে পাঁচজনের লাশ পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
প্রসিকিউটরদের উপস্থিতি ও আবেদন
চিফ প্রসিকিউটরের সঙ্গে শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, আব্দুস সোবহান তরফদার, গাজী মনোয়ার হোসেন তামিম, ও বিএম সুলতান মাহমুদ।
তারা তিন আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার আবেদন জানান।