ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা শনাক্তে মাঠে জামুকা, যাচাইয়ের মুখে ১ লাখ ২২ হাজার সনদ

সারা দেশে প্রায় ১ লাখ ২২ হাজার ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার অভিযোগের প্রেক্ষিতে মাঠপর্যায়ে যাচাই কার্যক্রম শুরু করেছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) (Jatiyo Muktijoddha Council – JAMUKA)। সোমবার (২ জুন) কুমিল্লা সার্কিট হাউসে (Cumilla Circuit House) ৩১ জন অভিযোগপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধার শুনানি অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

মন্ত্রীসভা ও প্রশাসনের উদ্যোগ

ফারুক-ই-আজম বীরপ্রতীক (Faruk-e-Azam Bir Protik) অন্তর্বর্তী সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর মুক্তিযোদ্ধা তালিকা ও সনদ যাচাইয়ের নির্দেশ দেন। তার পরবর্তী নির্দেশনায় সারাদেশ থেকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে হাজারো অভিযোগ জমা পড়ে, যা যাচাইয়ের জন্য জেলা প্রশাসক (District Commissioner)দের মাধ্যমে মাঠপর্যায়ে পাঠানো হয়।

মাঠপর্যায়ে যাচাইয়ের প্রয়োজনীয়তা

জামুকার মহাপরিচালক শাহিনা খাতুন বলেন, “ঢাকায় বসে কারা আসল মুক্তিযোদ্ধা তা নির্ধারণ করা সম্ভব নয়। এজন্য মাঠপর্যায়ে যাচাই করছি।” জামুকার সদস্য খ. ম. আমীর আলী বলেন, “সব সরকার শুধু সনদ দিয়েছে, যাচাই করেনি। আমরা এবার সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান অক্ষুণ্ন রাখতে চাই।”

ভুয়া সনদের পরিসংখ্যান

মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, দেশে সনদধারী মুক্তিযোদ্ধা ২ লাখ ৮ হাজার ৫০ জন। সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত ৮৯ হাজার ২৩৫ জন। জামুকার মতে, এর মধ্যে অন্তত ১ লাখ ২২ হাজার জনের সনদ ভুয়া বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। ১৯৯৪ সালের বিএনপি সরকারের তালিকা (৮৬ হাজার) মূল ভিত্তি ধরে যাচাই চলছে।

বিগত ১৫ বছরে গেজেট বাতিল হয়েছে ৩৯২৬ জনের। নির্ধারিত বয়সের (১২ বছর ৬ মাস) নিচে থাকা ২১১১ জনের সনদ ইতোমধ্যে বাতিল হয়েছে। ১৪টি ক্যাটাগরিতে চলমান মামলার সংখ্যা ২৭১৯টি।

আজ কুমিল্লায় ৩১ জনের শুনানি

প্রথম ধাপে কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলার ৩১ জনের বিরুদ্ধে শুনানি হচ্ছে। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন:

  • মো. সিরাজুল ইসলাম (লাকসাম ও চৌদ্দগ্রাম)
  • মো. পেয়ার মিয়া ও হাবিবুর রহমান (চৌদ্দগ্রাম)
  • আব্দুর রহিম, আব্দুল কাদের (নাঙ্গলকোট, বরুড়া)
  • জব্বার আলী, আবুল কাশেম, হেলেনা বেগম, কৃষ্ণা সাহা (মুরাদনগর, ব্রাহ্মণপাড়া, বেগমগঞ্জ, চাঁদপুর)

শুনানিতে উপস্থিত থাকবেন অভিযুক্ত ব্যক্তি, স্থানীয় প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধা, অভিযোগকারী ও মাঠপ্রশাসনের প্রতিনিধি।

উদ্দেশ্য: মুক্তিযুদ্ধের ডেটাবেজ নির্মাণ

জামুকার দাবি, যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে একটি প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার ডেটাবেজ তৈরি হবে এবং ভুয়াদের চিহ্নিত করে সনদ বাতিল, ভাতা বন্ধ, এমনকি আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।