নির্বাচন ইস্যুতে সরকার ও বিএনপির দূরত্ব বাড়ছে, রাজনৈতিক তিক্ততা অনিবার্য হতে পারে

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সরকারের সঙ্গে বিএনপি (BNP)-র দূরত্ব ক্রমেই রাজনৈতিক তিক্ততায় রূপ নিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারেক রহমান (Tarique Rahman)সহ বিএনপির সিনিয়র নেতাদের বক্তব্য এবং সরকারের প্রতিক্রিয়ায় দুই পক্ষের অবস্থান আরও দৃঢ় ও সংঘাতময় হয়ে উঠছে।

নির্বাচন না হলে “আর কখনও হবে না”: বিএনপি নেতাদের হুঁশিয়ারি

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ (Salahuddin Ahmed) বলেছেন, “ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন না হলে, বাংলাদেশে আর কখনো নির্বাচন হবে না।” একইসঙ্গে তিনি দাবি করেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হওয়া দেশের জনগণের স্পষ্ট দাবি।

এর আগে তারেক রহমান ভার্চুয়াল বক্তৃতায় বলেছেন, “জাতীয় নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা চলতে দেওয়া যাবে না। ডিসেম্বরেই নির্বাচন হতে হবে।”

প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে উত্তেজনা

অপরদিকে, জাপান সফরে থাকা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস (Dr. Muhammad Yunus) এক অনুষ্ঠানে জানান, নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে আগামী জুনের মধ্যে যে কোনো সময় হতে পারে। একইসঙ্গে তিনি বলেন, “দেশের সব দল নয়, একটি নির্দিষ্ট দল ডিসেম্বরেই নির্বাচন চায়।”

এই মন্তব্য ঘিরে বিএনপি ও তাদের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। বিজেপি (BJP), এলডিপি, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, নাগরিক ঐক্য (Nagorik Oikya)সহ ৩৪টি দল স্পষ্টভাবে বলেছে, তারাও ডিসেম্বরেই নির্বাচন চায়।

সরকারের উপদেষ্টাদের অপসারণ ও রোডম্যাপ চায় বিএনপি

বিএনপি সরকারের প্রতি দাবির তালিকায় রেখেছে—নির্বাচনি রোডম্যাপের পাশাপাশি দুই উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলম এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার অপসারণ। এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় বিএনপি হতাশা জানিয়েছে।

জামায়াতের অবস্থানও বদলাচ্ছে

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, প্রথমে সংস্কারকে গুরুত্ব দেওয়া জামায়াতে ইসলামি (Jamaat-e-Islami) এখন দ্রুত নির্বাচনের পক্ষে সুর উঁচু করছে। দলের নিবন্ধন ফিরে পাওয়া এবং এটিএম আজহারুল ইসলামের মুক্তির পর দলটির অবস্থান বদলেছে বলেও ধারণা করা হচ্ছে।

বিশ্লেষকদের পর্যবেক্ষণ: দ্বন্দ্ব তীব্র হওয়ার আশঙ্কা

মোহাম্মদ মজিবুর রহমান (Mohammad Mojibur Rahman), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, “নির্বাচনের বিষয়ে অনিশ্চয়তা থেকে যাচ্ছে। সরকার যেন এক ধরনের ‘প্যারানয়েড স্টেট অব পলিটিক্স’ তৈরি করছে।”

আরেক বিশ্লেষক সাইফুল আলম চৌধুরী (Saiful Alam Chowdhury) বলেন, “সরকারের তালিকায় নির্বাচন সংস্কার ও বিচারের পর তৃতীয় স্থানে রয়েছে। বিপরীতে বিএনপি এটিকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এ অবস্থান দ্বন্দ্ব বাড়াবে।”

তিনি আরও বলেন, “ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে বিএনপি সহযোগিতা করতে পারে, কিন্তু তা না হলে আগাম মাসগুলোতে পরীক্ষা, রোজা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা রাজনীতিতে বড় সংকট তৈরি করতে পারে।”

প্রধান উপদেষ্টার ব্যাখ্যা

তবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম (Shafiqul Alam) বলেছেন, “নির্বাচন আগামী ৩০ জুনের আগেই যে কোনো সময়ে হতে পারে।” যদিও এ বক্তব্যে পরিষ্কার কোনো তারিখের উল্লেখ নেই, ফলে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে।

উপসংহার

সব মিলিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সরকার যদি দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা না করে, তাহলে বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক তিক্ততায় পৌঁছানো সময়ের ব্যাপার মাত্র। নির্বাচনের আগে সরকার-বিরোধী দলগুলোর মধ্যে অবিশ্বাস ও চাপ-দাবির রাজনীতি আগামী দিনে আরও সংঘাতময় পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।